একজন আলেম— যিনি অন্ধ ছিলেন, তিনি শুধু একটি ফাতাওয়ার কিতাবই লিখেছেন; যা হচ্ছে ৩০ খণ্ড। যার মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ১২ হাজার ৮৭৭। গড়ে প্রতি খণ্ড ৪২৯ পৃষ্ঠারও বেশি। যে আলেমের কথা বলছি তিনি হচ্ছেন আলে শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ (রহ.)। তাঁর ফাতাওয়ার কিতাবের নাম মাজমুওয়ু ফাতাওয়া ইবনে বাজ।
১৯৯৩ সাল থেকে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি ছিলেন। আলে শায়খ বলতে শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.)-এর বংশকে বুঝায়, যাকে বর্তমান সৌদি আরবের প্রধান সংস্কারক হিসেবে দেখা হয়। আর তৎকালীন সেই আলে শায়খের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিই ছিলেন শায়খ ইবনে বাজ (রহ.)। আলে শায়খের সর্বোচ্চ সম্মানিত ব্যক্তিকেই সৌদিতে প্রধান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়।
আরো পড়ুন
পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহালকলড্রপের শীর্ষে গ্রামীণফোন
তিনি ১৯১০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তার চোখে একটি গুরুতর সংক্রমণ হয় এবং তার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। ১৯৯৯ সালে ৮৮ বছর বয়সে পৃথিবী থেকে তিনি বিদায় নেন।
তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। যা শুনতেন তাই মুখস্থ হয়ে যেত। তার সামনে কিতাবাদি পড়ে শোনানো হতো। এমনকি কোথাও সফরে যাওয়ার সময়ও গাড়িতে তার পাশে বসে বই পড়ে পড়ে শুনানো হতো। সালাতে যাতায়াতকালে একইভাবে গাড়িতে বসে কিতাবাদি পড়া হতো। তিনি সময়কে খুব গুরুত্ব দিয়ে চলতেন। সরকারি বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পরও নিয়মিত দারস বা আলোচনা ছাড়তেন না।
মাকতাবাতুশ শামেলাতে মোট ৪৩টি এবং ইসলাম হাউস ডট কম আরবি বিভাগে আরও ১০টি; মোট ৫৩টি গ্রন্থ তার পাওয়া যায়। এর মধ্যে ছোট-বড় রকমারি গ্রন্থই রয়েছে। শুধু এই ৫৩টি গ্রন্থের পৃষ্ঠা সংখ্যাই হিসাব করে দেখা গেছে ২৩ হাজার ৩৩৪ পৃষ্ঠা হয়।
যার মধ্যে আগে উল্লিখিত ফাতাওয়ার কিতাব ছাড়াও ১৪ খণ্ডে রচিত তার আরও একটি ফাতাওয়ার কিতাব আমরা পাই, যার নাম ফাতাওয়া নুরুন আলাদ-দারব। এর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬ হাজার ১১৭। গড়ে প্রতি খণ্ড প্রায় ৪৩৭ পৃষ্ঠা। শুধু তার ৫৩টি গ্রন্থের মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৩ হাজার ৩৩৪ কেই যদি তার জীবনের অর্ধেক সময় দিয়ে ভাগ করি, তাহলে প্রতিদিন প্রায় দেড় পৃষ্ঠা করে তিনি রচনা করেছেন!
যদি তার ৫৩টি গ্রন্থের গড় পৃষ্ঠা হিসাব করি তাহলে প্রতিটি গ্রন্থের পৃষ্ঠা সংখ্যা প্রায় ৪৪১! তদুপরি জানার বাইরে আরও কিছু কিতাব বাকি রয়ে গেল, যেগুলোর হিসাব এখানে আসেনি।
আল্লামা আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন, ‘হক কথা বলার ক্ষেত্রে তিনি বেশ নির্ভীক ও স্পষ্টভাষী, তবে প্রাজ্ঞ ও বিচক্ষণ বলে সর্বমহলে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বহু বছর ধরে তিনি দৃষ্টিহীনতার শিকার, কিন্তু তার অন্তর্দৃষ্টি অতিশয় প্রখর।’ (বাইতুল্লাহর মুসাফির: ২১৩)
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।