বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারী ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর কোভিড-১৯ এর আর্থসামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব কেমন পড়েছে তা নিয়ে একটি গবেষণা করে তরুণ গবেষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করার উদীয়মান গবেষণা-সংগঠন ‘বিকে স্কুল অব রিসার্চ’।

পরবর্তীতে এই গবেষণাটি প্রবন্ধ আকারে মালয়েশিয়ার কিউ৩ (স্কোপাস ইনডেক্সড্) ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এশিয়া প্যাসিফিক স্টাডিজ জার্নালের ১৮তম ভলিউমের ০২ নম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এই গবেষণা প্রবন্ধটি ইউনিসেফ তাদের উইমেন এন্ড চিলড্রেন রিসার্চ লাইব্রেরিতে ফিচার করেছে।

বিকে স্কুল অফ রিসার্চের ০৫ জন তরুণ গবেষক দুই বছর ব্যাপী এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষকের দায়িত্ব পালন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এবং বিকে স্কুল অব রিসার্চের ডিরেক্টর বিজন কুমার।

এ প্রকল্পে গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক এবং বিকে স্কুল অব রিসার্চের রিসার্চ এসোসিয়েট ডাঃ সুস্মিতা দে পিংকি ও ডাঃ অরিন্দম সিং পুলক। এছাড়াও, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্টের গবেষক সাইয়েদা রায়হানা কামাল এবং নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিকে স্কুল অব রিসার্চের রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট রাশেন্দা আজিজ এই গবেষণা প্রকল্পে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

কেন এই গবেষণাটি করার প্রয়োজন মনে করলেন? উত্তরে গবেষণা প্রকল্পের অন্যতম গবেষক ডাঃ সুস্মিতা দে পিংকি বলেন, “শরণার্থীরা এমনিতেই নানান সংকটের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করে। কোভিড-১৯ এর কারণে উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিদ্যমান সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।

এই কঠিন সময়ে বিশেষত নারী ও কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করছে তা উদঘাটন করা খুবই জরুরী। এমন প্রেক্ষাপট থেকেই আমরা রোহিঙ্গা নারী এবং কিশোর-কিশোরীদের ওপর কোভিড-১৯ এর আর্থসামাজিক ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব কেমন পড়েছে তা অনুসন্ধান করার প্রয়াস করেছি।”

গবেষণা থেকে কী ফলাফল এসেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ অরিন্দম সিং পুলক বলেন, “এই গবেষণায় আমরা দেখেছি যে কোভিডকালীন ৬৩ শতাংশের বেশি রোহিঙ্গা নারী এবং কিশোর-কিশোরী খাদ্য সংকটে ছিল এবং এ সময় প্রায় ৮৭ শতাংশ রোহিঙ্গা নারী এবং কিশোর-কিশোরী পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল।

এছাড়াও, সরকার কর্তৃক দেশব্যাপী সাধারণ চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপের কারণে মহিলারা, বিশেষ করে গর্ভবতী নারী এবং বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোরীরা, প্রজনন বিষয়ক স্বাস্থ্যসেবা-প্রাপ্তি নিয়ে পূর্বের চেয়ে অধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল৷”

এই গবেষণা থেকে কী ধরনের নীতিমালা সুপারিশ করা হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্পের প্রধান গবেষক বিজন কুমার বলেন, “বাংলাদেশ সরকার এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতার করে যাচ্ছে। তারপরও তারা নানা ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে।

এই সংকট নিরসনের জন্য আমরা এই গবেষণা থেকে দুই ধরনের সুপারিশ করেছি। এক, সাময়িক সমাধান- কোভিডকালীন রোহিঙ্গা নারী ও কিশোর-কিশোরীদের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া। দুই, স্থায়ী সমাধান- আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারক এবং বিশ্ব রাষ্ট্রনায়কদের সাথে বাংলাদেশ সরকারকে একযোগে কাজ করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করা।”

উল্লেখ্য, বিকে স্কুল অফ রিসার্চ ২০১৫ সালে কয়েকজন তরুণ গবেষকের হাত ধরে পথচলা শুরু করে। এই সংগঠনের প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে লন্ডন থেকে। ২২টি দেশের ৬০ জনের অধিক তরুণ গবেষক এবং তিন শতাধিক তথ্য-সংগ্রহক নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গবেষক ও অধ্যাপকদের পরামর্শে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কর্মশালাসহ সকল ধরনের শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে এই সংগঠন। টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, নারী ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, মানসন্মত শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য, অভিবাসন ও শরণার্থী, পরিকল্পিত নগরব্যবস্থা নিয়ে গবেষণা করা এই সংগঠনের আন্তর্জাতিক জার্নাল ও বইয়ে ২০টির অধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

সংগঠনটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান পরিচালক বিজন কুমার বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ফান্ডিং পেলে আমাদের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে এবং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করে তোলার পাশাপাশি আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে সমর্থ হব।