আসাদুজ্জামান আপন,জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিভাগ গুলো বাইরে থেকে দেখতে ফিটফাট মনে হলেও ভিতরে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। বিভাগের সামনে সৃষ্টি হয়েছে পুরাতন- অব্যবহৃত জিনিসপত্রের স্তুপ। চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা নষ্ট হচ্ছে বিভাগের নিজস্ব সৌন্দর্য।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভবন গুলোর কিছু বিভাগে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ক্লাস রুমের সামনে চলাচলের জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে ভাঙ্গা বেঞ্জ, জং ধরা লোহা লক্কর, ব্যবহার অযোগ্য চেয়ার টেবিল। এগুলো অপসারণ না করার পিছনে কারণ দেখানো হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম কানুনকে।

নতুন একাডেমিক ভবনে চারতলায় ফার্মেসি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি ল্যাব ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ মিলে ৩টি বিভাগ। সেখানে ফার্মেসি বিভাগের ক্লাসরুম গুলোর সামনে করিডরে স্তুপ করে রাখা হয়েছে পুরাতন বেঞ্জ সহ ভাঙ্গাচুরা জিনিসপত্র। এতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে স্বাভাবিক চলাফেরায়। ময়লার স্তরের কারণে নিশ্চিত করা যাচ্ছে না ল্যাবের কার্যকারি পরিবেশ।

এ বিষয়ে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, একই ফ্লোরে তিনটি বিভাগ, ক্লাস রুমের সংকটের কারণে অন্যদের ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এতে স্বাভাবিক চলাফেরাতেই অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয় তার‌ উপর এই পুরাতন জিনিসপত্রের স্তুপ আরো ভোগান্তিতে ফেলেছে।

এছাড়া ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী তামিম ইকবাল জানান, নতুন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ গুলোর গুণগত মান, পরিবেশ দেখতে। কিন্তু শুরুতেই তারা এমন অবস্থা দেখে বিভাগের প্রতি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর প্রভাবে গতবছর ভর্তির সময় ১০ম মেধা তালিকা দিয়েও শিক্ষার্থী পাচ্ছিলো না বিভাগগুলো।

এ বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি দেশের বাইরে থাকায় সম্ভব হয়নি। তবে তার অবর্তমানে দায়িত্বে থাকা ড. সুকুমার বেপারী জানান, এগুলো অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে চেয়ারম্যান আসলে ভাল বলতে পারবেন।

এছাড়া নতুন একাডেমিক ভবনে বিভাগগুলো স্পেস সংকটে ভোগে। অনেকে ফাঁকা জায়গা গুলো বিভিন্ন ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক রুম দেখতে অনেক চাকচিক্য হলেও পাশেই অব্যবহৃত জিনিসপত্রের স্তুপে জায়গা দখল করে আছে এবং পাশে থাকা শিক্ষক রুমের সৌন্দর্য অনেকাংশে কমিয়ে দিচ্ছে।

এনিয়ে বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ গোলাম মোস্তফা জানান, শীতকালীন ছুটির আগে উপাচার্য ও ট্রেজারার মহোদয় বিষয়টি দেখেছেন এবং আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। আর অব্যবহৃত জিনিসপত্র আমরা চাইলেই বিক্রি করতে পারিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে করতে হয়।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব মোঃ মহিউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, করোনায় ক্লাস বন্ধ থাকার কারণে অনেক বেঞ্জ নষ্ট হওয়ার ফলে ওখানে রাখা হয়েছে। আমাদের প্লানিং এ আছে ওখানে একটা অফিস রুম হবে। আর্থিক কিছু সংকট এবং করোনায় কাজটি এগোনো সম্ভব হয়নি। বিষয়টি বিভাগীয় একাডেমিক কমিটিতে উত্থাপন করে খুব দ্রুতই একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়া বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন, ভাষা শহীদ রফিক ভবনের বিভাগগুলোয় রয়েছে অনেক সমস্যা। ক্লাস রুমের সৌন্দর্য, ওয়াশ রুমের সংকট, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ রয়েছে নানা সংকট। রুমের জানালা পুরাতন হওয়াই ভেঙ্গে পড়েছে, পর্দা গুলো অনেক নোংরা হয়ে গেছে, মাকড়সার জালে ছেয়ে গেছে দেয়াল গুলো। জানালার গ্লাস ভাঙ্গা থাকায় বৃষ্টির সময় পানিতে ভিজে যাচ্ছে বেঞ্জ ।

বিজ্ঞান ভবনের এক শিক্ষার্থী জানান, জানালার গ্লাস গুলো ভাঙ্গা থাকায় শীতের ঠান্ডা বাতাস রুমে বয়ে যায়। অতিরিক্ত ঠান্ডায় মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।

শুধু বিভাগ নয় নতুন একাডেমিক ভবনে অডিটরিয়ামের সামনে ফেলে রাখা হয়েছে লিফটের কাজে ব্যবহৃত লোহার খন্ড, অকেজো মেশিন সহ ছোটবড় জিনিসপত্র। এতে সেখানে থাকা শিক্ষক রুমে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষকরা। এ বিষয়ে সেখানে কাজ করতে থাকা এক শ্রমিক জানান, এগুলো বিক্রির টেন্ডার না হওয়াই পড়ে আছে। তাছাড়া কিছু রিপেয়ার করে ব্যবহার করা যেতে পারে।

উল্লেখ্য যে, কেরানীগঞ্জে প্রায় দুইশত একর জায়গা নিয়ে আধুনিক ও সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নতুন ক্যাম্পাসের কাজ শুরু হয়েছে। সকলের আশা নতুন ক্যাম্পাসে গেলে এসব সংকট নিরসন হবে দ্রুতই।