মোঃ শরিফ উদ্দিন, শেরপুর প্রতিনিধি: এবার আবহাওয়া অনুক‚ল থাকায় শেরপুর জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। স্বল্প সময়ে চাষ হয়, উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় আমন ধান কাটার পর জমি পতিত না রেখে জমিতে সরিষা উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকেরা।
এতে কৃষকেরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মেটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। এ ছাড়া কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধিতে জেলার ৫টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার মোট ২৫০০০ হাজার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে সরিষার বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। জেলার শ্রীবরদী ও নকলা উপজেলায় প্রচুর আগাম সরিষার চাষ হয়েছে। সদর উপজেলার চরাঞ্চল গুলোতেও দেখা মেলে একই চিত্র। মাঠের পর মাঠ সরিষা ক্ষেতে হলুদ ফুল এসেছে। যেন হলুদ কাপড়ের চাঁদর বিছানো হয়েছে দিগন্তজুড়ে। তবে যারা দেরিতে বীজ বপন করেছেন সেই সরিষা ক্ষেত গুলোতে কেবল ফুল আসতে শুরু করেছে।
সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের ৬নং চর ও ৭ নং চর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে অন্য চিত্র। এখানের অনেক কৃষক শীত কালীন সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য আগাম সরিষা চাষ করেছেন। সেই শাক বিক্রি করে আবার সরিষা উৎপাদনের জন্য নতুন করে বীজ বপন করছেন। এ বছর জেলার ৫টি উপজেলায় ৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আগাম সরিষ চাষ হয়েছে। যার মোট উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার মেট্রিকটন। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক
৪ মেট্রিকটন। জানা যায়, শেরপুরে গত বছর ৮ হাজার মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হয়েছে। এবার প্রায় ৪ হাজার মেট্রিকটন উৎপাদন বের্শি হবে বলে ধারনা করা হ”েছ।
কামারের চর ইউনিয়নের ৬ নং চর গ্রামের কৃষক আসাদুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আমি দেড় বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এর মধ্যে অর্ধেক জমি থেকে সরিষার শাক হিসেবে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। বাকিটুকা রেখেছি তেল বানানোর জন্য।
কুড়িকাহনিয়া ইউনিয়নের ইন্দিলপুর গ্রামের কৃষক কামরুল হোসেন বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর সরিষার দাম বাড়বে খবর পেয়ে আমরা সবাই বেশি পরিমান জমিতে সরিষা চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করি দামও ভালো
পাবো। তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, উৎপাদন বাড়লে ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে ফেলে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। আশা করি সরকার বিষয়টা দেখবে।
নকলা উপজেরার চন্দ্রকোনা ও নারায়নখোলা এলাকার কৃষক নাজমুল, কাজল মিয়া বলেন, ১ কেজি সরিষাতে মোট ৪০০ এমএল তেল তৈরি হয়। এছাড়াও আমাদের সরিষা ফুলের মধু দিয়ে বাণিজ্যিক ভাবে মধু চাষ করছে অনেকেই। আমাদের এলাকার প্রায় অর্ধেক লোক সরিষা চাষ করেছে। ফলন ভালো বলে আমরা একটু স্বস্তিতে আছি।
শেরপুর জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সুকল্প দাস বলেন, তেলের ঘাটতি পূরণের জন্য দেশে তেল ফসলের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। তেল ফসলের মধ্যে সরিষা অন্যতম। সরকার আগামী দুই বছরের মধ্যে সয়াবিনের ওপর ৪০ শতাংশ চাপ কমাতে এবং সয়াবিন তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষের মহা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আমরা কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ সৃর্ষ্টির জন্য স্বপ্ল মেয়াদি রুপা আমন ধানের চাষ করার পরামর্শ দিয়েছি। যার ফলে
কৃষক দ্রæত সময়ের মধ্যে ধান কেটে সরিষা আবাদ করতে পেরেছে। এবার শেরপুরে সরিষা চাষে একটা বিপ্লব হবে বলে আশা করছি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।