আসাদুজ্জামান আপন,জবি প্রতিবেদক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে শুরু হয়েছে অষ্টরম্ভার। ৩৬ বিভাগের একাডেমিক কমিটি পৃথক পৃথকভাবে গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত ডিনদের মাধ্যমে উপাচার্যকে জানালেও এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুচ্ছে থাকা নিয়ে তীব্র বিরোধিতা থাকলেও অস্পষ্ট অবস্থানে উপাচার্য।
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পদ্ধতিতে থাকা না থাকা নিয়ে নাটকীয়তা শুরু হয়েছে। । ইতিমধ্যে দুই দফায় পিছিয়েছে বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল। এনিয়ে তৈরি হচ্ছে সমালোচনা।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকা না থাকা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ একডেমিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত ২২ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু কোনো কারণ না উল্লেখ করে দুইদিন আগে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একাডেমিক কাউন্সিল স্থগিত করে ২৭ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউজিসির ডাকা সভায় যোগদানের জন্য সেই বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল স্থগিত করে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে স্থগিত হওয়া বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) আবারও তা স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মতবিনিময় সভাকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
একাধিক বিভাগের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, গুচ্ছ থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগগুলোর একাডেমিক কমিটি। ৩৬ বিভাগের একাডেমিক কমিটি পৃথক পৃথকভাবে গুচ্ছে না থাকার সিদ্ধান্ত ডিনদের মাধ্যমে উপাচার্যকে জানিয়েছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তারা।
এদিকে বারবার বিশেষ একাডেমিক কাউন্সিল স্থগিত হওয়ার কারণে শিক্ষকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক নেতারা। তারা বলছেন, উপাচার্য চাইলে কোনো ডিনকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল করতে পারেন। তা না করে বার বার সভা স্থগিত করে গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে টালবাহানা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম লুৎফর রহমান বলেন, ‘গুচ্ছ নিয়ে আলোচনার কথা ছিল ২৪ জানুয়ারির একাডেমিক কাউন্সিলে। কিন্তু উপাচার্য মহোদয় এ নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ কাউন্সিল ডাকেন। সেটাও স্থগিত করে ২৭ ফেব্রুয়ারি ডাকা হয়। এবারও স্থগিত করা হয়েছে। উপাচার্য বাইরে সভা করতে গেলে, তিনি চাইলেই একজন ডিনকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল করতে পারেন। কিন্তু তা না করে বারবার স্থগিত করা হচ্ছে। এভাবে কালক্ষেপণ করে এটা অনেকটা গড়িমসি করা হচ্ছে।’
এদিকে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে স্বতন্ত্র ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এ নিয়ে মানবন্ধন ও উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেন তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে এসে স্বতন্ত্র ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরে আসতে উপাচার্যকে চিঠি দেন সমিতির নেতারা। সেখানে তারা ১০ দফা দাবিও উত্থাপন করেন।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের সাথে সাধারণ সভায় সকল শিক্ষক মতামত দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে থাকবে না। আগামীকাল শিক্ষামন্ত্রী মত বিনিময় সভায় আমাদের ডেকেছেন আমরা সেখানে সকল শিক্ষকদের মত তুলে ধরবো।‘
শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধে শিক্ষক সমিতি তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি সকল শিক্ষকদের মত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই এ মতামত পরিবর্তন হবে না। তবে শিক্ষামন্ত্রী অনুরোধ করলেও আমরা শিক্ষকদের নিয়ে আবার বসে সিদ্ধান্ত নিবো।’
এবিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হকের সাথে বার বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।