![](https://dailykolomkotha.com/wp-content/uploads/2021/11/59641dfa-18aa-484a-8697-5dc837766953_nn.jpg)
কোমড়ে উৎপন্ন স্নায়ুসমূহ (নার্ভ) কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে মাজা ব্যথার পাশাপাশি একপাশ বা উভয় পাশের রান, হাঁটু, হাঁটুর নিচের গোছা, গোড়ালি বা পায়ের আঙুল পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এ ছাড়াও শরীরের এসব জায়গায় ঝিন-ঝিন, শিন-শিন করে, পায়ের বোধ শক্তি কমে যায়, পর্যায়ক্রমে পা দুর্বল হয়ে যেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে রোগী হাঁটতে, দাঁড়াতে এমনকি বসতেও পারে না।
অন্যদিকে মানুষের ঘাড়ে (সারভাইকাল) উৎপন্ন স্নায়ুগুলো ঘাড় থেকে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কাজেই ঘাড়ের ডিস্ক প্রোল্যাপ্সে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘাড়ের ব্যথার পাশাপাশি ডান বা বাম হাত বা উভয় হাতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। লাম্বার ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের মতো এখানেও হাত ঝিন-ঝিন, শিন-শিন করে, হাতের বোধ শক্তি কমে যায়। এক পর্যায়ে হাত দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এমনকি হাত-পা উভয়ই দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
মেরুদণ্ডের নরম হাড় বা ইন্টারভার্টেব্রাল ডিস্ক গঠনগতভাবে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস (কেন্দ্রমধ্যস্থিত জেলির মতো পদার্থ) এবং অ্যানিউলাস ফাইব্র্যোসাস (চারপাশের শক্ত ফাইবার বা আঁশ ও ছোট ছোট রক্তানালী) দিয়ে তৈরি। মানুষের দাঁড়ানো অবস্থায় বা ওজন বহনকালে কেন্দ্রে থাকা জেলির ওপর চাপ পড়ে, কিন্তু শক্ত অ্যানিউলাস ফাইব্র্যোসাস সেই চাপ নিয়ন্ত্রণ করে ডিস্কের গঠন ঠিক রাখে। কিন্তু বেশি ওজন বহনে বা অনিয়ন্ত্রিত নড়াচড়ায় নিউক্লিয়াস প্যালপোসাসের ওপর মাত্রাতিরিক্ত বা অসম চাপ পড়লে সেই অতিরিক্ত চাপ অ্যানিউলাস ফাইব্র্যোসাস আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ফলে নিউক্লিয়াস প্যালপোসাস অ্যানিউলাস ফাইব্র্যোসাস এবং কখনও কখনও অ্যানিউলাস ফাইব্র্যোসাস ছিঁড়ে কোনো একদিকে বের হয়ে আসে। ফলে মেরুরজ্জু (স্পাইনাল কর্ড) অথবা স্নায়ুমূল (নার্ভরুট) অথবা উভয়ের ওপরেই চাপ পড়ে।
এছাড়া লেজারের অপটো-থারমো মেকানিক্যাল স্টিমুলেশনের মাধ্যমে ছিঁড়ে যাওয়া অ্যানিউলাস ফাইব্র্রোসাসের পুরো ক্ষমতা রিপেয়ার বা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে হাড়, মাংস ও চামড়া কাটার যেমন প্রয়োজন হয় না, তেমনি রোগীকে অজ্ঞান করারও প্রয়োজন হয় না। ফলে ডায়াবেটিস বা হৃদরোগীর ক্ষেত্রেও লেজার সার্জারিতে তেমন কোনো সমস্যা দেখা দেয় না। আর হাড়-মাংস না কাটার ফলে লেজার প্রয়োগের স্থানও দুর্বল হয় না এবং কোনো ক্ষতচিহ্নও (স্কার) থাকে না। যে কারণে ভবিষ্যতে এই অংশে স্কারের টানের কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না।
উন্নত বিশ্বে ডিস্ক প্রোল্যাপ্সের বেশির ভাগ রোগীরই এখন আর কেটে অপারেশন করা হয় না। সারভাইক্যাল/লাম্বার ডিস্ক প্রোলাপ্সের বেশির ভাগ রোগীই পারকিউটেনিয়াস লেজার ডিস্ক ডিকম্প্রেশনের (পিএলডিডি) মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করে থাকে। বাংলাদেশেও এখন হাড় ও মাংস না কেটে ঘাড় ও কোমর ব্যথাসহ মেরুদণ্ডের সমস্যার চিকিৎসা অত্যন্ত সফলভাবে করা হচ্ছে।
ডা. মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী। লেজার সার্জারী বিশেষজ্ঞ, পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব লেজার সার্জারী এন্ড হসপিটাল
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।