ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার মানেই হলো অনেক টাকার মালিক। কিন্তু কারো কারো জীবনে এই ক্রেডিট কার্ডই ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, অতীতের তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়েছে ক্রেডিট কার্ড। ক্রেডিট কার্ড যতটা ভাল ঠিক ততটাই খারাপ। ঠিক মতো ব্যবহার করতে না পারলে বা কার্ড ব্যবহারের সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ঋণে জর্জরিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতীতে এমন বহু উদাহরণ রয়েছে যেখানে দেখা গেছে শুধুমাত্র ভুলভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ফলে আর্থিক অনটনে ভুগছে স্বচ্ছল পরিবার। তাই কোনো ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।
লিমিট নিয়ে সাবধান
প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই গ্রাহকদের একটি নির্দিষ্ট ক্রেডিট লিমিট বেঁধে দেয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমা আপনি নিজেরে নির্ধারণ করুন। কারণ নিজের আয়, ব্যয়, খরচের হিসেব আপনার থেকে ভাল কেউ জানে না। তাই সমস্ত বিষয় বিশ্লেষণ করে তবেই সেই সীমারেখা নির্ধারণ করুন। এতে প্রকৃতপক্ষে আপনারই সুবিধা হবে। আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এই সীমা বাড়াতে পারেন। তবে ক্রেডিটের সীমা বেড়ে যাওয়া মানেই আপনি তার উপরে ভরসা করে যখন তখন যা ইচ্ছা তাই কেনাকাটি করলেন তেমনটা করবেন না। এতে উল্টে ফাঁসবেন আপনিই।
দ্রুত পরিশোধ করুন
অনেকেই ক্রেডিট কার্ডে বাকি থাকা বিল সময় মতো মিটিয়ে দেন না। মাসের পর মাস ফেলে রাখেন বা প্রদেয় তারিখের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। যার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই অজান্তে কাঁধের উপরে বাড়তি ঋণের বোঝা চাপতে থাকে। মনে রাখবেন, প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট প্রদেয় তারিখ থাকে। সেই তারিখ পার হলেই সংস্থার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত হারে জরিমানা করা হয়। যার পরিমাণ অনেক। তাই ক্রেডিট কার্ডের বিল আসার পরে শেষ প্রদেয় তারিখের জন্য অপেক্ষা না করে যত দ্রুত সম্ভব সেই বকেয়া অর্থ মিটিয়ে ফেলুন। তা হলে বাড়তি সুদের বোঝা গুনতে হবে না।
অটো ডেবিটের সুবিধা
প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই অটো ডেবিটের বিকল্প দেয়। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট দিনে ব্যাংক থেকে নিজ থেকেই ক্রেডিট কার্ডে পেমেন্ট হয়ে যায়। এত দু’টি সুবিধা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের বিল মেটাতে ভুলে যান অনেকেই। অটো ডেবিট হয়ে গেলে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আবার সময় মতো পেমেন্ট হয়ে গেলে বাড়তি ঋণের বোঝা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

ধারের বিষয়টি খেয়াল রাখুন
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সময়ে সর্বদা সতর্ক থাকুন। দেখে নিন কত টাকা আপনি ধার নিচ্ছেন এবং সেই টাকা কত দিনে পরিশোধ করতে পারবেন। প্রয়োজনে সেই অর্থ ইএমআই-তে ভেঙে নিন। প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ড সংস্থাই নির্দিষ্ট একটি অঙ্কের বিনিময়ে তিন মাস, ছয় মাস ও ১২ মাসে ইএমআই-তে ভেঙে নিতে দেয়। বাড়তি সুদ এড়াতে এই পন্থাও অবলম্বন করা যেতে পারে।
ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও
ক্রেডিট কার্ডের বিল সঠিক সময়ে পরিশোধ করলেও ক্রেডিট স্কোর নেমে যেতে পারে। এটি নির্ভর করে ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিওর উপরে। যে গ্রাহক যত বেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তার ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও বেশি। আবার যে গ্রাহকদের ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও বেশি সেই গ্রাহকও ব্যাংকের চোখে ঝুঁকিবহুল গ্রাহক। তাই যে কোনো গ্রাহকেরই উচিত ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও ঠিক রাখা। এই ক্ষেত্রে একাধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচকে ভাগ করে দিন। অন্য দিকে আপনার ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সীমার ৫০ শতাংশ বা তার কম ক্রেডিট ব্যবহারে আপনার ক্রেডিট স্কোর বাড়তে পারে।
নগদ টাকা উত্তোলন নয়
প্রত্যেক সংস্থাই ক্রেডিট কার্ডে নগদ অর্থ তোলার বিকল্প দেয়। তবে ক্রেডিট কার্ড থেকে নগদ অর্থ না তোলাই ভালো। কারণ কার্ডে নগদ অর্থ তুললে সুদ চালু হয়ে যায় যা অনেকটাই বেশি।

কলমকথা/সাথী