স্টাফ রিপোর্টার মনির খান|লোহাগড়া নড়াইল

ইজিবাইক চালক সাকিবের হতদরিদ্র পরিবারটিতে তিন বেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে এনজিও ও দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কেনা হয় ইজিবাইক, যেটি চালানোর দায়িত্ব পায় তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় সাকিব শিকদার। ১০ম শ্রেণির ছাত্র সাকিব সেই ইজিবাইক চালিয়ে ঋণ শোধের পাশাপাশি সংসারের চাহিদা মেটাচ্ছিল।


তবে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা চালক সাকিব কে অজ্ঞান করে ইজিবাইকটি (ব্যাটরিচালিত অটোরিকশা) চুরি করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাকিবের পরিবারটির এখন একটিই প্রশ্ন—ইজিবাইকটি পাওয়া যাবে তো? না পেলে কিস্তি দেব কেমন করে?

ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের এড়েন্দা বাজার নামক স্থানে। এ ঘটনায় সাকিব শিকদার বাদী হয়ে লোহাগড়া থানায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে মামলা করেছে। পুলিশ দুপুরেই এজাহারভুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে ১০ ফেব্রুয়ারি ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকটি এখনো উদ্ধার হয়নি।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের দেবদুন গ্রামের মকিতুর রহমান মোল্লা (৬০) ও তাঁর ছেলে আরাফাত মোল্লা (৩৫)। আরেক আসামি মকিতুর রহমান মোল্লার আরেক ছেলে আজম মোল্লা (৩৮) গ্রেপ্তার হননি।
লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দুজন সংঘবদ্ধ ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের সদস্য। ইজিবাইকটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সাকিব শিকদারদের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী ইউনিয়নের আটলিয়া গ্রামে। বাবা ইকবাল শিকদার একজন দিনমজুর। একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার এবং গ্রাম্য দাদন ব্যবসায়ীর থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেয় সাকিবের পরিবার। সাকিব পড়াশোনার পাশাপাশি এর আগে বাদাম বিক্রি করত। এর থেকে জমানো ছিল পাঁচ হাজার টাকা। ওই ৯৫ হাজার টাকায় পাঁচ মাস আগে একটি ইজিবাইক কেনে তার পরিবার। সাকিব সেটি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিল এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছিল।

সাকিব জানায়, গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নড়াইল শহর থেকে দুজন যাত্রী তার ইজিবাইকে ওঠে। এরপর তাকে লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের এড়েন্দা বাজারে নিয়ে আসে। সেখানে ওই দুজন বিস্কুট ও পানি খায়। সাকিবকেও খেতে দেয়। তা খাওয়ার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে সাকিব। খোয়া যায় ইজিবাইক। এরপর স্থানীয় লোকজন তাকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। দুই দিন অজ্ঞান ছিল সাকিব। সাকিবের ভাষ্যমতে, সেই দুজন যাত্রীর মধ্যে আরাফাত মোল্লা গ্রেপ্তার হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে লোহাগড়া থানার মধ্যে সাকিব ও তার মা–বাবার আকুতি ছিল একটাই, ‘ইজিবাইকটি পাব তো?’ তাঁরা তিনজনই বারবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন, আর আকুতি জানাচ্ছিলেন ইজিবাইকটি ফিরে পাওয়ার। সাকিবের বাবা ইকবাল শিকদার বুকফাটা আর্তনাদে বলছিলেন, ‘এখন ঋণের টাকা শোধ করবো কেমন করে ? আমার সব শেষ হয়ে গেল।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমানের নির্দেশে এস আই মোঃ তৌফিক হাসানের নেতৃত্বে এ এস আই তপন কুমার কুন্ডু সহ একটি চৌকস টিম অপারেশন পরিচালনা করে আসামিদের ধরতে সক্ষম হন।