দৈনিক মাত্র দুই শ থেকে তিন শ টাকা জমা করলে এক সময় ঢাকা শহরে একটি করে ফ্ল্যাট বা জমি দেওয়া হবে। এমন আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা চক্রের তিন জনকে আটক করেছে র্যাব-৪। মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় ক্ষুদ্র ঋণদান সমিতির নামে অবৈধ ব্যাংকিং লেনদেনের সঙ্গে জড়িত চক্রের এই তিন সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ফয়েজউল্লাহ (৫০) এবং দুই নারী সহযোগী আফরিন আক্তার (২৪) ও মোছা. তাসলিমা বেগম (৩৩)।আজ মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্যাটালিয়ান ৪-এর অধিনায়ক ডিআইডি মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, মিরপুর এলাকার কিছু ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার র্যাব-৪-এর একটি দল রাজধানীর শাহ আলীর মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সে অভিযান পরিচালনা করো এ সময় প্রতারণার দায়ে ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ এর সভাপতিসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মাধ্যমে বস্তি এলাকার প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক, সেলুনের কর্মচারী, ফুটপাতের দোকানদার, গৃহকর্মী ও নিম্নআয়ের মানুষের ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে ডিপিএস করতে উদ্বুদ্ধ করত তারা। চক্রটি এই কাজ করানো হতো মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের দিয়ে। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা ভুক্তভোগীদের প্রলুব্ধ করে ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নানান কৌশলে অফিস কার্যালয়ে নিয়ে যেত। এভাবে প্রতিদিন আনুমানিক ২৫০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে সঞ্চয় সংগ্রহ করত তারা। যে সঞ্চয়ের টাকা জমাদানকারী আর ফেরত পেত না। এভাবে গত ৫ মাসে আনুমানিক ৫০ লাখের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানটি ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতি লিমিটেড’ হিসেবে রেজিস্টার্ডভুক্ত হলেও প্রতারণামূলকভাবে ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে প্রচার ও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ২০ জন সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে ওই সমিতিতে ২৫০-৩০০ জন সদস্য রয়েছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়। প্রতিষ্ঠানের কোনো রক্ষিত জামানত নেই বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের সময় ভুয়া ‘শিবপুর ক্ষুদ্র ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ এর অফিস থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ভর্তি ফরম, ঋণ গ্রহীতার ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের জীবনবৃত্তান্ত, লিফলেট, সিল, বিভিন্ন নামের সঞ্চয় পাসবই, অব্যবহৃত পাস বই, দৈনিক কিস্তি ও ঋণ বিতরণের বিভিন্ন রেজিস্টার, ব্যাংকচেকসহ ব্যাংক স্ট্যাম্প, আইডি কার্ড, দৈনিক কিস্তি আদায়ের শিট, মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঋণের আবেদনপত্র, মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের সঞ্চয় ও ঋণ পাস বই, মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের হিসাব খোলার আবেদন, মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের অব্যবহৃত ডেবিট ভাউচার বই, মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশন সঞ্চয় আদায় শিট, ফয়েজউল্লাহর নামে কমিউনিটি ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির বিভিন্ন প্রকার সার্টিফিকেট, চেক বই, মনিটর, সিপিইউ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, চক্রটি মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প প্রচার করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিত। বিভিন্নভাবে অল্প সময়ে ঋণদানে নিশ্চয়তা দিয়ে সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ডিপিএস করতে আগ্রহী করা হতো ভুক্তভোগীদের। বলা হতো ১০-১৫ দিন ঠিকমতো নির্দিষ্ট হারে সঞ্চয় দিলে তাদের ঋণ দেওয়া হবে। কিন্তু দু’একজনকে ঋণ দিলেও কেউ সঞ্চয় থেকে ঋণ পেতো না। বরং কম্পানির কিছু সদস্য দৈনিক ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সঞ্চয় বা ডিপিএসের টাকা সংগ্রহ করার পর বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাত। বলা হতো, সময় মতো সঞ্চয় বা ডিপিএসের টাকা পরিশোধ না করলে সঠিক সময়ে ঋণ দেওয়া হবে না বা মেয়াদ শেষে তারা মুনাফা কম পাবে এবং জরিমানাও করা হবে।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদিত নয় এবং এনজিও হিসেবে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি আর্থিক লেনদেনের জন্য অনুমোদিত নয়। মাইসার ওয়েল ফেয়ার ফাউন্ডেশনের কোনো অনুমোদন নেই। কমিউনিটি ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নামক প্রতিষ্ঠানেরও অনুমোদন নেই।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।