আজ শুক্রবার পবিত্র জুমার দিন। মুসলমানের জন্য এই দিন হল ঈদ দিন। এ দিনের অনেক ফজিলত ও গুরুত্বের কথা একাধিকবার হাদিসে এসেছে। রাসুলে করীম (সা.) বলেছেন, ‘এটা শুক্রবার, যে দিনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের পূর্ববর্তী জাতি থেকে পৃথক করেছেন। ইহুদিদের জন্য বিশেষ ইবাদতের দিন ছিল শনিবার, খ্রিস্টানদের জন্য ছিল রোববার। যখন আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রেরণ করলেন, তখন শুক্রবারকে জুমার দিন হিসেবে পালন করতে নির্দেশ দিলেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৯৭)
জুমার প্রস্তুতি
সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, এরপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহ শুনবে, দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কার তার সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯)
আজান হলেই কাজকর্ম বাদ
মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিনে যখন (জুমার) নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা অনুধাবন করো।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯)
আগে আগে মসজিদে যাওয়া
রাসুলে করীম (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনে যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজের জন্য যায় এবং সামর্থ্যানুযায়ী নামাজ আদায় করে, ইমাম খুতবা শেষ করা পর্যন্ত নীরব থাকে, এরপর ইমামের সঙ্গে নামাজ আদায় করে, তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গোনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০২৪)
মসজিদে আগে গেলে বেশি সওয়াব
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শুক্রবার দিন মসজিদের প্রতিটি দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করে এবং (জুমার নামাজের) আগমনকারীদের নাম ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করতে থাকে। এরপর ইমাম যখন (মিম্বরে) বসে, তারা লেখাগুলো গুটিয়ে নেয় এবং খুতবা শোনার জন্য চলে আসে। মসজিদে যে আগে আসে, তার উদাহরণ সে ব্যক্তির মতো, যে একটি উটনি কুরবানি করেছে। তার পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মতো, যে একটি গাভী কুরবানি করেছে। তার পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মতো, যে একটি ভেড়া কুরবানি করেছে এবং তার পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মতো, যে একটি মুরগি দান করেছে। পরবর্তীজনের দৃষ্টান্ত তার মতো, যে একটি ডিম দান করেছে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০২১)
প্রতি কদমে নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সকাল সকাল গোসল করল, তারপর ইমামের কাছে বসে চুপ করে মনোযোগসহ খুতবা শুনল, প্রত্যেক কদমের বিনিময়ে সে এক বছরের নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৪৯৮)
খুতবায় মনোযোগী হওয়া
জুমার খুতবার সময় যে অমনোযোগী থাকল বা নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখল, সে নিশ্চয়ই মন্দ কাজ করল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সে জুমার কোনো প্রতিদান পাবে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭১৯)
খুতবার সময় নিষেধ করাও মানা
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি খুতবার সময় অপরকে কথা না বলতে বা নীরব থাকতে বলল, সেও জুমায় কোনো প্রতিদান পাবে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২০৩৩)
সুন্নতের গুরুত্ব
জুমার ফরজের পরবর্তী সুন্নত অনেকে ছেড়ে দেয়। অথচ আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মাঝে যে জুমার নামাজে শরিক হলো, সে যেন জুমার নামাজ (দু’রাকাত) শেষে চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৩৩)
দোয়া কবুল হয়
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে ভালো কিছু প্রার্থনা করলে আল্লাহ অবশ্যই তাকে তা দান করেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭১৫১; আস সুনানুল কুবরা, হাদিস : ১০২৩৪)
দোয়া কবুলের সময়
জুমার দিনে দোয়া কবুল হওয়ার সময়ের ব্যাপারে ৪৫টি মতামত পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ মত হলো, আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দোয়া কবুলের সময়। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনের কাঙ্ক্ষিত সময় হলো আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।’ (মুসনাদে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৫৪৬০; তিরমিজি, হাদিস : ৪৮৯)
সুরা কাহফ পাঠ
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে, একটি নুর তার পা থেকে আসমান পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। হাশরের দিনে এ নুর তার জন্য আলো হবে। এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (মুসতাদরিকে হাকিম, হাদিস: ২১২৫)
জুমা ছেড়ে দেওয়ায় শাস্তি
খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতময় সত্ত্বেও অনেকে জুমার নামাজে অবহেলা করে। অযথা ও বিনা কারণে কখনও জুমার নামাজ না পড়া ঠিক নয়। এ ব্যাপারে শরিয়তে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত পর পর তিন জুমা পরিত্যাগ করে, আল্লাহতায়ালা তার অন্তরে মোহর এঁটে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১০৫২; তিরমিজি, হাদিস : ৫০২; মুসলিম, হাদিস : ১৯৯৯)
গোটা বিশ্বের মুসলিমদের নিকট জুমার দিনটি অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আলাদা। এটা বান্দা নয়, স্বয়ং মহান আল্লাহ তায়ালা দিনটিকে আলাদা মর্যাদা দান করেছেন। জুমার দিন অত্যন্ত তাৎপর্যবহ। পবিত্র আল-কোরআনে জুমা নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহতায়ালা জগৎ সৃষ্টির পূর্ণতা দান করেছেন এই দিনে। তাই মুসলিম উম্মাহ জুমার দিন শুক্রবার বিশেষ ইবাদতের লক্ষে মসজিদে একত্রিত হয়ে থাকে। জুমার দু’রাকাত ফরজ নামাজকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।