বছর ঘুরে আবারও আগমন ঘটেছে শাবান মাসের। ইসলামে এ মাসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ মাসে রয়েছে অনেক বরকত ও ফজিলত।

শাবান মাসের পরেই আগমন ঘটে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সমন্বয়ে পবিত্র রমজান মাসের। রমজান মাসে আল্লাহতায়ালার পক্ষ হতে বান্দার জন্য রয়েছে অসংখ্য নেয়ামত। রমজান মাসে বান্দা একনিষ্ঠভাবে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও তাকওয়া অর্জন করতে পারে।

প্রিয় নবী (সা.) শাবান মাসে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি বেশি নফল রোজা, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজ আদায় করতেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) রজব ও শাবান মাসব্যাপী এ দোয়া বেশি বেশি পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজব ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগ না রমাদান’।

অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব মাস ও শাবান মাস আমাদের জন্য বরকতময় করুন আর আমাদের রমজানে পৌঁছে দিন।’

শাবান মাসে রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর বিশেষ কিছু আমল তথা মাহে রমজান পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে মুমিনের কি করা উচিত তা আলোচনা করা হয়েছে।

১. রোজা রাখা: একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিশ্বনবী (সা.) শাবান মাসে সবচেয়ে বেশি রোজা পালন করেছেন।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসূলকে (সা.) রমজান ব্যতীত অন্য কোনো মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করতে দেখিনি। কিন্তু শাবান মাসে তিনি বেশি নফল রোজা রেখেছেন’ (মুসলিম)। তাই আমাদেরও শাবান মাসে রোজা রাখা উচিত।

২. বেশি দরুদ ও সালাম পাঠ করা: প্রত্যেক মুমিনের জন্য প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদের (সা.) ওপর দরূদ শরীফ পাঠ করা সর্বোত্তম ইবাদত। এটি মানুষের জন্য একমাত্র ইবাদত যা স্বয়ং মহান আল্লাহতায়ালা ও ফেরেশতাগণ পালন করেন এবং পৃথিবীর সকল ঈমানদারকে নবীর প্রতি দরূদ পড়ার নির্দেশ আল্লাহতায়ালা নিজেই দিয়েছেন।

পবিত্র কুরআনে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি দরুদ পাঠের নির্দেশনা সংবলিত আয়াতটিও এ মাসেই নাযিল হয়েছিল।

বরকতময় আয়াতের অর্থ হলো: ‘নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও ।‘ (সুরা: আল-আহযাব-৫৬)

৩. তওবা ও ইস্তেগফার করা: মানুষ স্বভাবত শয়তানে ধোঁকায় নিজেকে গুনাহের কাজে লিপ্ত করবে। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালা হলেন, ‘গাফির’ ক্ষমাকারী, ‘গফুর’ ক্ষমাশীল, ‘গফফার’ সর্বাধিক ক্ষমাকারী।

তাই বান্দা যখন নিজের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত, লজ্জিত হয় এবং তওবা ও ইস্তেগফার পাঠ করে আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তখনই আল্লাহতায়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। তওবাকারীকে আল্লাহতায়ালা ভালোবাসেন।

৪. কুরআন পড়া ও বুঝা: মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন পড়া ও বুঝা সর্বোত্তম নফল ইবাদত। রমজান মাস কুরআন নাযিলের মাস। তাই রমজানের প্রস্তুতি হিসেবে কুরআন পড়া ও বুঝা উচিত।

৫. দান-সদকা করা: ধনী-গরিব নিয়েই আমাদের জীবন। কারো অগাধ পরিমাণ সম্পদ আছে, আবার কারো কিছুই নেই। ইসলাম সাম্যের ধর্ম। তাই ধনবান ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে নিদিষ্ট পরিমাণে গরিব ব্যক্তিদের দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) নিজে সর্বদা বেশি বেশি দান-সদকা করতেন এবং সাহাবাগণকে দান করতে উৎসাহী করতেন।

রমজান মহান আল্লাহর অপূর্ব রহমতের বারিধারায় সমৃদ্ধ একটি মাস। মুমিনের জন্য রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। তাই রমজান মাস যথার্থভাবে উদযাপনের জন্য শাবান মাস থেকেই এর প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়।

আসুন, নিজের খারাপ ও বাজে অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করি। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে শাবান মাসে বরকত মাহাত্ম্য উপলব্ধি করার মতো সঠিক জ্ঞান দান করুক। পাশাপাশি পবিত্র মাহে রমজানের জন্য নিজেকে ইবাদতের জন্য উপযুক্ত করার তাওফিক দান করুক। আমিন।

 

কলমকথা/ বিথী