মোবাইলের যুগে ধারাবাহিকভাবে কমছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) টেলিফোন গ্রাহকের সংখ্যা। মাসে ১৫০ টাকায় আনলিমিট প্যাকেজ দিয়েও গ্রাহক ধরে রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। যাদের ঘরে এখনো সংযোগ আছে, তারাও টেলিফোন তেমন একটা ব্যবহার করেন না। একসময়ে লাভজনক ব্যবসা টেলিফোন এখন বিটিসিএলের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
বিটিসিএল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিটিসিএলের গ্রাহক ৪ লাখ ৯০ হাজার। দেশে একসময় টেলিযোগাযোগের মাধ্যম বলতে ছিল বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডের (বিটিটিবি) টেলিফোন সেবা, যা টিঅ্যান্ডটি নামে পরিচিত ছিল। এই টেলিফোনের সংযোগ ছিলে বহু প্রতীক্ষিত। এখন নানামুখী ছাড় দিয়েও গ্রাহক ধরে রাখতে পারছে না বিটিসিএল।
গ্রাহক সংখ্যা কমতে থাকার মধ্যে বিটিসিএল ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে টেলিফোন থেকে টেলিফোনে কথা বলতে মাসে বিল সাকল্যে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে একটি ‘প্যাকেজ’ ঘোষণা করে। টেলিফোন থেকে মোবাইলে কল করলে প্রতি মিনিটে ৫২ পয়সা (ভ্যাট যোগ হবে) দিতে হবে গ্রাহককে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে টেলিফোন সংযোগ দেওয়া হয় বিনামূল্যে। বর্তমানে ঢাকার মধ্যে বিটিসিএলের সংযোগ নিতে গ্রাহককে ১ হাজার সংযোগ ফি এবং ১ হাজার টাকা জামানত ফি দিতে হবে। ঢাকার বাইরে ৬০০ টাকা জামানত এবং ৬০০ টাকা সংযোগ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সংযোগ নিতে মাত্র ৩০০ টাকা জামানত এবং ৩০০ টাকা সংযোগ ফি গুনতে হবে গ্রাহককে।
বিটিটিবি থেকে বিটিসিএল নামে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর সময়ে উত্তরাধিকার সূত্রে ৮ দশমিক ৬৬ লাখ ব্যবহারকারী পেয়েছিল সংস্থাটি। কমতে কমতে ১৪ বছরে পুরো অর্ধেকে নেমে এসেছে গ্রাহক সংখ্যা। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সঙ্গে তুলনা করলে সংখ্যাটি তুচ্ছ। দেশে বর্তমানে ১৬৬ মিলিয়নেরও বেশি মোবাইল ফোন সিম ব্যবহারকারী রয়েছেন। ১৮ বছরের বেশি বয়সী জাতীয় আইডি কার্ড আছেন, এমন যে কেউই সর্বাধিক ১৫টি সিম কিনতে পারেন। এসব সুবিধার কারণে টেলিফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। এর সঙ্গে নিত্য দিনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং মেরামত ভোগান্তিতে গ্রাহক আস্থা ঠেকেছে তলানিতে।
গ্রাহক ভোগান্তি নিরসনে ২৪ ঘণ্টা কল সেন্টার চালু করেছে বিটিসিএল। ১৬৪০২ নম্বরে কল করে বিটিসিএলের সেবাসংক্রান্ত অভিযোগ দিলে স্বল্প সময়ে সমাধান করছে কর্তৃপক্ষ। বিটিসিএলের নেটওয়ার্ক মনিটরিং এবং সামগ্রিক সেবা ব্যবস্থাপনায় বিশ্বমানের এনওসি স্থাপন করা হয়েছে। গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে ‘টেলিসেবা’ নামে অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে। অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস ও ওয়েব প্ল্যাটফরমের ‘টেলিসেবা’ অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকের অভিযোগ গ্রহণ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী প্রিয়ম সাহা বলেন, ‘আমাদের বাসায় ছোটবেলা থেকেই টেলিফোন দেখছি। আগে ঝড়, বৃষ্টি, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে প্রায়ই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতো। সেই সংযোগ চালু করতে রীতিমতো অশান্তিতে পড়তে হতো। এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল থাকায় আমার মা ছাড়া টেলিফোন তেমন কেউ ব্যবহার করেন না। কিছুদিন আগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে বিটিসিএলের কল সেন্টারে অভিযোগ দিলে দেখলাম পরের দিন এসে ঠিক করে দিয়ে গেছে।’
সেবায় বৈচিত্র্য আনতে ‘আলাপ’ নামে বিটিসিএল আইপি কলিং অ্যাপ চালু করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অ্যাপটি উন্মুক্ত করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে ফ্রি অননেট কল, এইচডি ভিডিও কল, সাশ্রয়ী অফনেট কল, ভিডিও কনফারেন্সসহ আকর্ষণীয় ফিচারসহ অ্যাপটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অ্যাপটিতে বর্তমানে সক্রিয় গ্রাহক ৮ লাখ ৩ হাজার ৫১ জন। কিন্তু এসব উদ্যোগ গ্রাহক বাড়াতে পারছে না, বরং কমেছে।
এ ব্যাপারে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন, টেলিফোন সেবার মান বাড়াতে বিটিসিএল নানা উদ্যোগ নিয়েছে। সংযোগের জন্য আবেদন থেকে শুরু করে বিল দেওয়া পর্যন্ত পুরো কাজই এখন ডিজিটাল ব্যবস্থায় হচ্ছে। টেলিফোনে সংযোগ কিংবা যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। তবে প্রযুক্তির পরিবর্তন হওয়ার কারণে গ্রাহকের টেলিফোনে আগ্রহ কম। আমরা অন্যান্য সেবার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে ধরে রেখেছি। টেলিফোন আমাদের ঐতিহ্য। এটা ধরে রাখতে আমরা কাজ করছি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।