পাকিস্তান আমল থেকে এই জায়গাত হামেরা বাড়ী করে আছি, খালি শুনেছি সরকারি রাস্তা আছে কিন্তু বাস্তবে কিছুই নেই, হামরা ভালোমতো চলাফেরা করিবা পারিনা। মেম্বার চেয়ারম্যানলা খবরও নেয় না।এভাবে ভারাক্রান্ত কণ্ঠে কথা গুলো বলতেছিলেন ষাটোর্ধ বৃদ্ধ হোসেন আলী।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভূল্লী থানার বালিয়া ইউনিয়নের তুরুকথা মাদ্রসা পাড়া গ্রামের প্রায় ১০০ পরিবারের চলাচলের উপযোগী রাস্তা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
গ্রামে শুরুতে কাঁচা রাস্তা থাকলেও গ্রামের ভেতরে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে নেই চলাচলের উপযোগী রাস্তা। জরুরি সেবার গাড়িসহ কোনো গাড়িই গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। বৃষ্টি নামলে ও বর্ষাকালে গ্রামবাসীর রাস্তা না থাকার কষ্ট কয়েকগুন বেড়ে যায়।
গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মানুষ প্রতিদিন রাস্তা না থাকার কষ্ট নিয়ে জীবন যাপন করছে। রাস্তা না থাকায় প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী, চাকুরীজীবী, দিন মুজুর, কৃষকসহ পার্শবর্তী কয়েক গ্রামের মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। মৌসুমী ফসল ঘরে তুলতেও সমস্যায় পড়েন কয়েক গ্রামের মানুষ। বর্ষাকালে যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, রোগি থেকে লাশ সব কিছুই যেন থমকে যায় রাস্তা না থাকার কারণে। গ্রামবাসীসহ স্থানীয়রা রাস্তার দাবি জানিয়েছে।
জানা যায়, রাস্তাটি সরকারি রেকর্ডভুক্ত হওয়ার পরও স্থানীয় নরেন্দ্র অধিকারী রাস্তা কেটে ফসলি জমি ও গাছপালা লাগিয়ে দখল করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। রাস্তা বিষয়ে কোন কিছু বলতে গেলে উল্টো হুমকি ধামকি দেয় এবং বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে।
স্থানীয় কৃষক ইব্রাহীম আলী বলেন, রাস্তা না থাকায় আমরা প্রতিনিয়ত সমস্যায় দিন কাটাচ্ছি। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে এক প্রান্ত থেকে কোলে নিয়ে গ্রামে প্রবেশের মুখে রাস্তায় নিতে হয়। তাছাড়া এ্যাম্বুলেঞ্চ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশেরগাড়িসহ কোনো গাড়িই গ্রামে প্রবেশ করতে পারে না। আমরা ঠিকমতো ফসল ঘরে তুলতে পারি না। আমরা গ্রামবাসীরা একটা রাস্তা চাই।
স্থানীয় যুবক জানান, রাস্তা না থাকায় অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শেষ করে চাকরি পেয়েছি। কিন্তু বিয়ে করতে পারছি না। রাস্তা না থাকায় এখন এই গ্রামে কেউ আত্মীয় করতে চায় না। তাছাড়া আমার কর্মস্থলে যেতেও রাস্তার খুব দরকার। আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করবো আমাদের রাস্তাটি যেন দ্রুত নির্মাণ করা হয়।
কৃষক আব্দুল করিম জানান, সরকারি রাস্তা থাকার পরেও আমাদের মানুষের জমিনের উপর দিয়ে যেতে হয়। তারা জোরপূর্বক ভাবে রাস্তা দখল করে চাষাবাদ করতেছে এবং সেই জমিতে গাছ, বাঁশ লাগিয়েছে। রাস্তার বিষয়ে বলতে গিয়ে কয়েকদিন আগে দখলদার নরেদ্র অধিকারী ও স্থানীয় ইউপি সদস্যের যোগসাজসে আমার পরিবারের উপর হামলা হয়। আমি এর বিচার চাই এবং
আমরা রাস্তা চাই, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ আমরা যেন দ্রুত রাস্তা পাই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ইচ্ছে করলে অল্প দিনের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ করার ব্যবস্থা করতে পারতেন কিন্তু তিনি রাতারাতি প্যাকেট হয়ে যান। এছাড়াও রাস্তা নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। প্রয়োজনে গ্রামবাসিদের সঙ্গে নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা যেতে পারতো।
আমরা দ্রুত রাস্তা চাই, মানুষের জমিনের উপর দিয়ে যেতে চাই না।
অভিযুক্ত নরেন্দ্র অধিকারী বলেন, আমি চলাচলের জন্য অন্য রাস্তা দিছি। সরকার যদি এই রাস্তা চায় তাহলে অব্যশই ছেড়ে দিব। যেহেতু এটি সরকারি রেকর্ডভুক্ত রাস্তা।
ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তাটি নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছিলো কিন্তু মাঝখানে ঝামেলার জন্য বন্ধ করা হয়েছে।
৫ নং বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভূট্টো চৌধুরী বলেন, বালিয়া ইউনিয়নে সরকারি রেকর্ডীয় অনেক রাস্তা কৃষি জমিতে পরিনত হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি রাস্তা উদ্ধার করা হয়েছে। ৪ নং ওয়ার্ডে রাস্তার বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেখানে নিজেদের কলোহের কারণে রাস্তাটি করা সম্ভব হয়নি। আমি ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে সেখানে খুব দ্রুত রাস্তা নিমার্ণের ব্যবস্থা করবো।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, তুরুকপথা মাদ্রাসা পাড়া গ্রামের রাস্তার বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি তবে ঐ স্থানে সরকারি রেকর্ডের রাস্তা অন্তর্ভুক্ত থাকলে কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে সেখানে রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হবে। সরকারি জায়গা কেউ অবৈধভাবে দখলে রাখতে পারবে না।
স্থানীয়দের দাবি সরকারি রাস্তাটি দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে ভালো মানের রাস্তা তৈরী করে দিলে কষ্ট দূর হবে বলে তারা আশাবাদী।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।