অন্যান্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা ও সংস্কার করা দরকার বলে মন্তব্য করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
তিনি বলেন, ‘আইনটি প্রয়োগ করতে গিয়ে এর ফাঁক-ফোকর, ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়বে, সুতরাং আপনি এখন পর্যোলোচনা করেন। ফাঁক-ফোকর সংশোধন করেন। একই অপরাধে ডিজিটাল আইনে সাজা পাঁচ বছর, আরেক আইনে সাজা তিন বছর। তাই অন্যান্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পর্যালোচনা ও সংস্কার করা দরকার। এজন্য তো এক হাজার বছর সময় লাগে না। তিন মাস খেটে আইনটি সংস্কার করে দেন, খামোখা হৈ-চৈয়ের মুখে পড়ছেন। সরকারকে বিব্রত করছেন। তাই আমি বলবো, অবিলম্বে ডিজিটাল আইন সংস্কার করেন, আরও আধুনিক করেন।’
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘সাংবাদিকতা ও নীতি-কাঠামো: প্রবণতা ও সুপারিশ’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান। গণমাধ্যম উন্নয়ন সংগঠন ‘সমষ্টি’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রতিথযশা সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইনজীবী ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাধারণ নাগরিকও গ্রেপ্তার হয়েছেন। সাংবাদিক গ্রেপ্তারের পর তারা সোচ্চার, কথাবার্তা বলছেন, আইনমন্ত্রীও বলেছেন সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অভিযোগের পর আগে তদন্ত করব, তারপর গ্রেপ্তার করব। আমি যদি একই সুরে বলি অন্যান্য নাগরিকরা ভেসে এসেছেন নাকি? তারা সম্মানিত নাগরিক, সম্মানিত ভোটার, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে একই জিনিস প্রযোজ্য হবে না কেন? পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ। আমি মনে করি, মন্ত্রীদের এ ধরনের বৈষম্যমূলক কথা বলা ঠিক নয়।’
তিনি বলেন, ‘মামলা হলে আগে বিবেচনা করে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হবে, তাহলে এটা আইনে রাখেন। এটা সাংবাদিকদের জন্য আইন নয়। এটা দেশের ডিজিটাল জগতের নিরাপত্তা বিধানের আইন।’
অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের প্রয়োগ নেই জানিয়ে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘প্রেস কাউন্সিল আইন সংস্কারের একটা প্রস্তাব তৈরি করে দিয়ে এসেছিলাম (যখন তথ্যমন্ত্রী ছিলেন)। তিন বছর হয়ে গেলো, এটাতে রাষ্ট্রের তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। গণমাধ্যম কর্মী আইন, সম্প্রচার আইন তিন বছর আগে ক্যাবিনেটে গেছে। সাংবাদিকদের জন্য আইন সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেবে।’
ইনু বলেন, ‘আজকে যদি সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হয়, গণমাধ্যমের ভাই-বোনেরা অনেক নিরাপত্তা পাবেন। মালিকও নিরাপত্তা পাবেন। আমি মনে করি, সম্প্রচার আইনটা অবিলম্বে করা উচিত। সম্প্রচার কমিশনটা অবিলম্বে করা উচিত। গণমাধ্যমকর্মী আইনটা অবিলম্বে করা উচিত।’
সাবেক তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অনলাইনে যা কাজ হচ্ছে, নিউজ পোর্টাল, আইপি টিভি সব নিবন্ধন করে ফেলেন। আপনি নিরাপত্তা পাবেন। আমি আসার আগে পর্যন্ত আড়াই হাজার অনলাইন নিউজ পোর্টালের আবেদন জমা পড়েছিলো। এই পোর্টাল নিবন্ধন করতে এত দেরি হলো কেন? গোয়েন্দা রিপোর্টের জন্য আপনি ফেলে রাখছেন কেন? জানিয়ে দেন যে, আপনি পারবেন না ভাই। ঘোরাচ্ছেন কেন? হয়রানি করার তো দরকার নেই। যারা পাবেন তাদের দিয়ে দেন, তারা কাজ করুক। কোনো অসুবিধা তো নেই।’
ইনু বলেন, ‘রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসন যতদিন থাকবে ততদিন গণমাধ্যমের সঙ্গে বিরোধ চলতে থাকবে। কারণ, গণমাধ্যম হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। এর দায়িত্ব হচ্ছে প্রহরীর দায়িত্ব। জবাবদিহিতা অর্জন করার দায়িত্ব এবং সরকারের প্রশাসনের ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার প্রকাশ করার দায়িত্ব। স্বাভাবিকভাবে গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিচারবিভাগের সঙ্গেও প্রশাসনের দ্বন্দ্ব বিরোধ চলতেই থাকবে। বিচার বিভাগের দিকে যদি তাকান তাহলে দেখবেন প্রশাসনের অনেক কর্মকাণ্ড বিচার বিভাগ নাকচ করে দিচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত অনেক ব্যক্তির আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বা দুর্নীতি কিংবা নৈতিক স্খলন ইত্যাদি বিষয়ে বিচার বিভাগ পদক্ষেপ নিচ্ছে। ফলে বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের কর্মচারীদের একটা সংক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘চমৎকার গণতন্ত্রেও প্রশাসনের সঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের দ্বন্দ্ব বিরোধ চিরন্তন। সেই দ্বন্দ্ব বিরোধ স্বীকার করে নিয়েই সাংবাদিকদের এগুতে হবে এবং কাজ করতে হবে।’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।