নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়াঃ

আজ কুষ্টিয়া পৌরসভার সামনে স্থানীয় চাষীদের নিয়ে ‘দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতি’র ব্যানারে একটি মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের অনুমোদিত বাজেট অনুযায়ী বর্তমান বাজারে নিম্নস্তরে বিদেশি কোম্পানির বাজারজাতকৃত আন্তর্জাতিক সিগারেটের ব্র‍্যান্ড মধ্যম ও উচ্চ স্তরে উন্নীত করে নিম্নস্তর শুধু মাত্র দেশীয় কোম্পানির দেশীয় সিগারেটের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবী জানানো হয়। এছাড়াও দেশীয় মালিকানাধীন তামাক শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিযোগিতা আইনের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

মানব বন্ধনে বক্তারা বলেন, আমরা এদেশের অবহেলিত গরিব তামাক চাষী। আমাদের মাটি এবং আবহাওয়া তামাক চাষের উপযোগী। ন্যায্য মূল্যে বিক্রি না করতে পারায় আজ আমরা ঠিকমত তামাক চাষ করতে পারছি না। দেশে বর্তমানে শুধুমাত্র দুটি বিদেশী কোম্পানী বেশি পরিমান তামাক ক্রয় করে এবং দু-একটি শতভাগ দেশীয়। মালিকানাধীন কোম্পানী অল্প পরিমান তামাক ক্রয় করে। কিন্তু আজ থেকে ১৫ বছর আগেও আমরা ২৫ থেকে ৩০টি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর কাছে ন্যায্য মূল্যে প্রচুর তামাক বিক্রি করতাম। তখন এই সকল দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলো কম দামের সিগারেট এবং বিদেশী কোম্পানী শুধুমাত্র বেশি দামের সিগারেট তৈরি করে বাজারজাত করতো। কিন্তু এখন বিদেশী কোম্পানীগূল বেশি দামের সিগারেটের সাথে সাথে কম দামের সিগারেট উৎপাদন করে বাজারজাত করছে। ফলে তাদের সাথে দেশীয় কোম্পানী গুলো প্রতিযোগীতায় পেরে উঠছে না।

সমাবেশে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানিতে কর্মরত কর্মচারী ও তামাক চাষীরা অভিযোগ করেন, শুধু নীতি সহায়তা না থাকার কারণে শতভাগ দেশীয় সিগারেট কোম্পানির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। অথচ এ দেশের অনেক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আদি ব্যবসা তামাক। বর্তমানে দেশের ৩০টি কোম্পানিতে কর্মরত এক লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তামাক চাষীসহ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ শ্রমিকদের রুটি-রুজি আজ হুমকির মুখে।

তারা আরো বলেন, বর্তমানে তামাক শুধুমাত্র দুটি বিদেশী কোম্পানী ক্রয় করায় তারা যে দাম দিচ্ছে তাই আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। প্রায়শই তারা উচ্চ গ্রেডের তামাক নিম্ন গ্রেডের দাম দিয়ে তাদের কাছে বিক্রয় করতে বাধ্য করছে। প্রতিযোগীতা মূলক বাজার না থাকার কারনে আমরাও কিছু করতে পারছি না।

দেশীয় কোম্পানীগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারলে তামাকের ন্যায্য মূল্য পাবার আশাবাদ ব্যাক্ত করে বক্তারা বলেন, দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলো কখনো এদেশ ছেড়ে যাবে না এবং তারা ব্যবসা বানিজ্য করে মুনাফা হলে তা এদেশেই বিনিয়োগ করে নতুন-নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে যা দেশের বেকার সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখবে। দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল তামাক থেকে সরকার প্রতি বছর ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে, তাই এই বাজার শুধুমাত্র দুটি বিদেশী কোম্পানীর হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন বক্তারা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তারা বলেন, আপনি আমাদের মা, আমাদের চাষাবাদ করার সুযোগ দিন। আমরা কাজ করে দু-মুঠো ডাল-ভাত খেতে চাই, আমরা উৎপাদন করতে চাই। আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোকে বাঁচানোর জন্য যে নীতিমালা দিয়েছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবী রেখে তারা বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে আপনি এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী ওয়াদা করে সংসদে বিল পাস করেছিলেন যে, শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী গুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরি হবে, যাতে তারা উৎপাদনে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে ২০১৮ সালের বাজেটে শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর জন্য মহান জাতীয় সংসদে যে নীতিমালা অনুমোদন হয়েছিল সেটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশীয় কোম্পানির জন্য নিম্ন স্তর সংরক্ষিত রেখে বহুজাতিক কোম্পানির আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডকে মধ্যম ও ঊচ্চমানে উন্নীত করার সুপারিশ করেন অর্থমন্ত্রী। সেই নীতিমালা বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে বক্তারা বলেন, আজ দেশের ও দেশের মানুষের প্রয়োজনে আইনটি কার্যকর করতে হবে।