![](https://dailykolomkotha.com/wp-content/uploads/2020/11/received_373622480533992-400x225.jpeg)
পটিয়ায় যুবককে নির্যাতনের ঘঠনায় বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল নেছারের হুমকি।
সুমনসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি-
পটিয়া থানাধীন জিরি ইউনিয়নের বাসিন্দা পুলিশ কনস্টেবল মোঃ নেছারউদ্দীন তার স্ত্রীর সাথে পরকীয়া আছে সন্দেহে এক যুবককে নিজগৃহে কথিত টর্চার সেলে উলঙ্গ করে মারধর ও অমানবিক নির্যাতনের পর মিথ্যা মামলায় জড়ানোর বিচার চেয়ে আইজিপি কমপ্লেইন সেল ও সিএমপি পুলিশ কমিশনারের কাছে পৃথক দুইটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। তৎকালীন বন্দর থানাধীন একটি ফাঁড়িতে কর্মরত কনস্টেবল নেছার উদ্দিন কে সাময়িক বরখাস্ত সহ শোকজ করা হয় ডিসি বন্দর সিএমপি। বরখাস্তকৃত নেছার উদ্দীন নিজের অপকর্ম ঢাকতে ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজ স্ত্রী ধর্ষিত হয়েছে মর্মে ২৮ শে জুন পটিয়া থানায় নারী নির্যাতনের মামলাও দায়ের করেছিলেন।
ভুক্তভোগী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রুবেলের পিতা নজির আহমদ ও বড়ভাই কামাল উদ্দীন বলেন, জায়গাজমি সংক্রান্ত পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার ভাইকে থানায় ধরে নিয়ে গিয়ে ২ দিন আটক করে রেখে পরে একটি মিথ্যা সাজানো মামলায় ২৮ শে জুন আদালতে চালান করা হয়।
কোনো মামলা না থাকা সত্ত্বেও বিনা ওয়ারেন্টে ২৬ শে জুন বুধবার বিকেলে ভেল্লাপাড়া এলাকা থেকে সাজ্জাদ হোসেন রুবেলকে নেছারউদ্দীনের উপস্থিতিতে ধরে নিয়ে যায় পটিয়া থানা পুলিশ। ২৮ শে জুন শুক্রবারে দায়েরকৃত গণ ধর্ষণ মামলার ১নং আসামী করে রুবেলকে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছিল বলে জানান এলাকার স্থানীয় কয়েকজন।
অপরদিকে, স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সন্দেহে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর যুবক আনোয়ার হোসেনকে ৩১ শে মে উলঙ্গ করে মারধর করা হয়। মারধরের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে পরবর্তীতে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান আনোয়ারের ভগ্নিপতি মোঃ শহীদ।
কনস্টেবল নেছার উদ্দিনের করা নারী নির্যাতন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করে জামিনে মুক্ত হয়ে মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রুবেলকে অমানবিক নির্যাতন করে ধর্ষণের স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছিলো বলেও জানান।
উক্ত মামলার ৩ নং আসামী মুন্নার বৃদ্ধ বাবা আহমদ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধর্ষণের অভিযোগে মিথ্যা এ মামলায় আমরা চারটি পরিবার আজ দিশেহারা। একজন পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে ও যোগসাজশে তৎকালীন পটিয়া থানার ওসি মোঃ বোরহান উদ্দীন মামলাটি গ্রহণ করেছিলেন বলেও অভিযোগ করেন মুন্নার পরিবার। আরেকজন আসামী সাজ্জাদ হোসেনের পরিবার কিছুই জানেনা কেন তাদের ছেলেকে এ মামলায় জড়ানো হয়। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান সাজ্জাদ একজন সাধারণ দর্জির কাজ করে বলেও জানা যায় স্থানীয় সুত্রে।
কোটরপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দার কাছ থেকে উক্ত ঘঠনা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, শুধুুমাত্র প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার দাম্ভিকতা প্রদর্শন করতে এই মিথ্যা মামলায় চারজন কে জড়ানো হয়। চারজনের মধ্যে ০১ নং আসামী নেছারের চাচাতো ভাই। তাদের মধ্যে জায়গাজমি সংক্রান্ত পূর্ববিরোধ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
যেই ঘরের দুইভাই পুলিশে চাকুরী করে, সেই ঘরে ঢুকে গণধর্ষণের ঘঠনা ও পরবর্তীতে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা একটি অবিশ্বাস্য, ভিত্তিহীন ও উদ্দিশ্যপ্রণোদিত বলে জানান সালাউদ্দীন সেলু নামের এলাকার এক যুবক। তিনি আরও বলেন, একজন পুলিশ সদস্যের স্ত্রীকে গণ ধর্ষণ করার পরও ৭ মাস পরে মামলা দায়ের এবং ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করার বিষয়টি আপনারা বিবেক দিয়ে বিবেচনা করলেই সব বুঝতে পারবেন। এখানে অন্য কোনো উদ্দিশ্যে চারটি পরিবারকে শায়েস্তা করে কোটরপাড়া এলাকার জনসাধারণ কে ভয়ভীতি দেখানোর একটা সংকেত বলেও মন্তব্য করছেন কেউকেউ।
মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার আতংকে ও লোক লজ্জার ভয়ে ৫ মাস ধরে ঘরছাড়া হয়ে নিরুদ্দেশ রয়েছে আনোয়ার হোসেন। তার পরিবারের সদস্য বলতে রয়েছে বৃদ্ধা অসুস্থ একজন মা। নিম্নআয়ের চাকুরী করা আনোয়ার হোসেন মায়ের ভরণপোষণ করতো তবে এ মামলায়। জড়ানোর কারণে চাকরীচ্যুত হয়ে ঘরছাড়া আনোয়ারের বৃদ্ধা অসুস্থ মা কে দেখার মতো আর কেউ নেই বলে জানান তিনি। এখন একমাত্র উপায় বলতে তিনি তার মেয়ের জামাতাদের বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে মিথ্যা ষড়যন্ত্র মূলক এই মামলা থেকে অব্যহতি প্রদানের আবেদন জানাবেন বলেও জানান আনোয়ারের বৃদ্ধা মাতা।
এদিকে, ডিসি বন্দর সিএমপি কার্যালয় থেকে উক্ত পুলিশ সদস্য নেছার উদ্দীনকে এমন ঘৃণিত ও অপেশাদার আচরণের জন্য শোকজ করা হয় এবং কিছুদিন আগে পটিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ বোরহান উদ্দীনকে বদলী করা হয় ও প্রশাসনের উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে মামলাটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বের সাথে তদন্ত করতে পিবিআই চট্টগ্রাম কে দায়িত্ব প্রদান করা হলেও এখনও হুংকার ছুড়ছেন নেছার উদ্দীন।
এ ব্যাপারে জানার জন্য বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল নেছারউদ্দীন কে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আনোয়ারকে মারধরের ভিডিওটি ছড়ানোর অভিযোগে নেছারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত মামলাটিও পিবিআই চট্টগ্রামে তদন্তাধীন রয়েছে। এই মামলার স্বাক্ষীগণকে নেছারউদ্দীন বিভিন্ন প্রলোভন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে জানান আনোয়ারের ভগ্নিপতি মোঃ শহীদ। তিনি বলেন, নেছারকে বরখাস্ত করা হলেও তার পরিবারের আরেক সদস্য পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার কারণে স্বাক্ষীরা ভীতিকর পরিস্থিতিতে রয়েছে। তাদেরকেও মিথ্যা কোনো মামলায় জড়ানো হতে পারে ভেবে অনীহা প্রকাশ করছেন দাপটশালী নেছারের বিরুদ্ধে দাড়াতে।
এ অবস্থায় গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে ভুক্তভোগী অসহায় চারটি পরিবার তাদের অসহায়ত্বের কথাগুলো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করার অনুরোধ করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।