বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকের জন্য মনোনীত সেই কাদির।
সুমনসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রিতিনিধি-
মুজিববর্ষ উপলক্ষে ফসলের মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি তৈরি করে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন কৃষক আবদুল কাদির।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষি জমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, মুজিব শতবর্ষ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল শাপলা ও নৌকার প্রতীকের আদল তৈরি করার স্বীকৃতিসরূপ কৃষক কাদিরকে বঙ্গবন্ধু পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি ইউনিয়নের পাড়া খালবলা গ্রামের কৃষক হাজী তারা মিয়ার ছেলে কৃষক আবদুল কাদির। ৩৩ শতক ফসলি জমিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তৈরি করে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
দিনভর দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই থাকে কৃষক কাদিরের জমিতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খালি পায়ে সবাই প্রবেশ করছেন সেই ফসলি জমিতে।
পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব মিলে ভিড় করছেন কৃষক কাদিরের এই অনবদ্য সৃষ্টি দেখতে। কেউ আবার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির পাশে দাঁড়িয়ে তুলছেন সেলফি। সেই ছবিগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিকে ঘিরে সেখানে গড়ে উঠছে একাধিক চায়ের দোকান। প্রতিকৃতির পুরো অংশটুকু ভালো করে দেখার জন্য সেখানে বাঁশ দিয়ে একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
কৃষক আবদুল কাদির বলেন, ‘আমি এক জন সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে আমি হৃদয়ে লালন করি সেই শৈশব থেকে। বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্য কিছুই করতে পারলাম না। সাধারণ মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে দুটি কথাও ভালো কোনো মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলার সুযোগ পাই না।
‘বঙ্গবন্ধুকে অন্তরে লালন করলে মঞ্চে না দাঁড়িয়েও যে, নিজের অবস্থান থেকে অনেক কিছুই করা যায়, আমি সেটিই করে দেখিয়েছি। আমি কল্পনাও করিনি এত সাড়া পাব। তবে এক্ষেত্রে বন্ধুমহল ডিজিটাল ক্লাবের সদস্যরা আমাকে সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতার কারণে আমি এই কাজটা করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও নৌকা প্রতীকে লালশাক ব্যবহার করেছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শাকের পাশাপাশি সরিষা বুনেছি। অন্যদিকে মুজিব শতবর্ষ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় ফুল শাপলা, জাতীয় পতাকাতে বেশি ব্যবহার করেছি বারি-১৪ জাতের সরিষা। বীজ ছিটানোর দুই সপ্তাহের পর প্রতিকৃতিগুলো স্পষ্ট হয়েছে।’
সামাজিক মাধ্যমে বঙ্গবঙ্গুর প্রতি কৃষক কাদিরের ভালোবাসার ছবি দেখে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পাড়া খালবলা গ্রামে যান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সারোয়ার জাহান শাওন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃষক কাদিরের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখে আমি মুগ্ধ। ফসলের মাঠেও যে বঙ্গবন্ধুকে এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলা যায়, এমন চিন্তা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও মাথায় আসেনি। কিন্তু কৃষক আবদুল কাদির সেটা করে দেখিয়েছেন।’
কেন্দুয়া বলাই শিমুল এলাকার গৃহিনী মেহেরুন্নেচ্ছা খানম প্রীতি জানান, বঙ্গবন্ধুকে ফসলের মাঠে এভাবে তুলে ধরার মাধ্যমে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কৃষক আবদুল কাদির।
নিজের জমিতে এভাবে ভালোবাসার প্রতীক চিহ্ন তৈরি করে গত বছর সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে আলোচনায় এসেছিলেন আব্দুল কাদির। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয় তার এমন কর্ম।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।