মঙ্গলবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ই-পেপার | আজকের পত্রিকা | আর্কাইভ | কনভার্টার অর্গানাইজেশন

মহাশূন্যের রায়ুগু গ্রহাণু থেকে নিয়ে আসা নমুনা থেকে যা জানা যাবে

অস্ট্রেলিয়ায় উদ্ধারকারীদের একটি দল বালুর ভেতর ক্যাপসুলটিকে খুঁজে পায়।

অস্ট্রেলিয়ায় উদ্ধারকারীদের একটি দল বালুর ভেতর ক্যাপসুলটিকে খুঁজে পায়।

 

মহাশূন্য থেকে ক্যাপসিউলে করে একটি গ্রহাণুর কিছু নুড়ি পাথর পৃথিবীতে আনার পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, সেগুলো একেবারে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

রায়ুগু নামের গ্রহাণু থেকে নুড়ি পাথর নিয়ে এই কন্টেইনারটি স্থানীয় সময় রবিবার ভোরে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার ওমেরা এলাকায় অবতরণ করে।

উদ্ধারকারীদের একটি দল বালুর ভেতর ক্যাপসুলটিকে খুঁজে পায়। প্যারাসুটটি ছিল একটি গাছের ওপরে আটকানো।

জাপানি মহাকাশযান হায়াবুসা-২ রায়ুগু গ্রহাণু থেকে এই নুড়িপাথরগুলো সংগ্রহ করেছে।

পৃথিবীতে ফেরত আসার আগে রায়ুগুতে প্রায় একবছর ধরে অনুসন্ধান করে মহাকাশযানটি। পৃথিবীর কাছাকাছি আসার পর মহাকাশযান থেকে ক্যাপসুলটি বের করে দেয় এবং যানটি ইঞ্জিন চালু করে অন্যদিকে চলে যায়।

আর ক্যাপসুলটি পৃথিবীর আবহাওয়া মণ্ডলে প্রবেশ করে।

হায়াবুসা-২ এর অফিসিয়াল টুইটার একাউন্ট থেকে জানানো হয়েছে, ক্যাপসিউল এবং সেটির প্যারাসুট খুঁজে পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় রবিবার সকালে।

প্যারাসুটটি ছিল কাছে একটি গাছের ওপরে আটকানো।

”হায়াবুসা-২ বাড়ি ফিরে এসেছে,’ জাপানে একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ড. ইয়ুচি তাসুডা, মিশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার।

”আমরা রত্নভাণ্ডারটি সংগ্রহ করতে পেরেছি। ক্যাপসিউলটি একেবারে ঠিকঠাকমতো সংগ্রহ করা গেছে, ” তিনি বলছেন।

তিনি জানিয়েছেন, সেখানে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

জাপানের ইন্সটিটিউট ফর স্পেস এন্ড অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সায়েন্সের মহাপরিচালক ড. হিতোশি কুনিনাকা বলেছেন, ”২০১১ সালে আমরা হায়াবুসা-২ মহাকাশযানের উন্নয়নের কাজ শুরু করি। সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হয়েছে।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, আগের মিশনগুলোয় অনেক কারিগরি জটিলতা দেখা গিয়েছিল। ”তবে হায়াবুসা-২ এর ক্ষেত্রে, আমরা নিয়মমতো সবকিছুই করেছি, শতভাগ করেছি। এবং পরিকল্পনা মতো গ্রহাণুর নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসতে সফল হয়েছি। ফলশ্রুতিতে আমরা মহাকাশ কর্মসূচীর পরবর্তী ধাপ শুরু করতে পারবো।”

পরবর্তী ধাপের মধ্যে রয়েছে এমএমএক্স নামের একটি মিশন শুরু করা, যার লক্ষ্য হবে মঙ্গলগ্রহের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ ফোবোস থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আনা।

পৃথিবীতে ফেরত আসার আগে রায়ুগু নামের গ্রহাণুতে প্রায় একবছর ধরে অনুসন্ধান করে মহাকাশযানটি।

শনিবার যখন অস্ট্রেলিয়ার কোবের পেডি অঞ্চলের আকাশে ক্যাপসিউলের আগুন দেখা দিতে শুরু করে, তখন অনেকেই এর ছবি তোলে।

সেকেন্ডে ১১ কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীর দিকে নেমে আসার সময় গতি শ্লথ করার উদ্দেশ্যে একসময় সেটি প্যারাসুট খুলে দেয়। এরপর থেকে নিজের অবস্থান জানিয়ে সংকেত পাঠাতে শুরু করে ক্যাপসিউলটি।

রয়েল অস্ট্রেলিয়ার এয়ারফোর্সের নিয়ন্ত্রিত এলাকা ওমেরা অঞ্চলে ক্যাপসুলটি নেমে আসে।

উদ্ধারকারী দল ভূমিতে ক্যাপসিউলের অবস্থান শনাক্ত করার পর একটি হেলিকপ্টারে করে সেখানে গিয়ে ক্যাপসিউলটি নিয়ে আসেন।

উদ্ধারকারী দলে ছিলেন জাপানের অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির সদস্য সাতোরু নাকাযাওয়া। তিনি সেই উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে বলছিলেন, ”হেলিকপ্টার নিয়ে আমরা সেখানে যাই এবং তখনো সেটি সংকেত দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় চারদিকে ছিল অন্ধকার, সুতরাং সেটা কোথায় ছিল, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না। আমি খুব খুব নার্ভাস ছিলাম।”

”আমরা ওই এলাকার ওপর দিয়ে অনেকবার ওড়াওড়ি করি এবং আমার মনে হচ্ছিল, হয়তো এটা সেখানেই আছে। এরপর সূর্য উঠতে শুরু করলো এবং আমরা ক্যাপসুলটি দেখতে পেলাম। মনে হলো, ওহ, আমরা ওটা খুঁজে পেয়েছি।”

”কিন্তু সূর্য পুরোপুরি না ওঠা পর্যন্ত আমাদের ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে,” তিনি বলছেন।

এরপর ক্যাপসিউলটিকে কাছাকাছি একটি স্থানে পর্যবেক্ষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরীক্ষার জন্য এর ভেতরে থাকা গ্যাস সংগ্রহ করতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা।

শনিবার যখন অস্ট্রেলিয়ার কোবের পেডি অঞ্চলের আকাশে ক্যাপসুলের আগুন দেখা দিতে শুরু করে, সেটি অনেক ক্যামেরার ছবি তোলার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে।

এরপরে ১৬ কেজি ওজনের এই ক্যাপসিউলটিকে বিমানে করে জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এটিকে জাক্সার সাগামিজাহায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য নিজে যাওয়া হয়েছে।

এই মিশনের উদ্দেশ্য ছিল রায়ুগু গ্রহাণু থেকে একশো মিলিগ্রামের বেশি নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসা।

বেলফাস্টের কুইন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যালান ফিটজসিমোন্স বলছেন, ” এই নমুনা থেকে শুধুমাত্র সৌরজগতের ইতিহাস নয়, বরং এসব গ্রহাণু সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।”

সৌরজগত তৈরি হওয়ার সময় যেসব বস্তুপিণ্ড অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল, সেগুলোই মূলত গ্রহাণু হিসাবে মহাশূন্যে ভেসে বেড়ায়। পৃথিবী তৈরিতে যেসব বস্তুপিণ্ড ব্যবহৃত হয়েছিল, সেরকম জিনিস দিয়েই গ্রহাণু তৈরি হয়, তবে সেগুলো কোন গ্রহ বা উপগ্রহের অংশ হয়নি।

লন্ডন ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের অধ্যাপক সারা রাসেল বলছেন, ”রায়ুগুর মতো গ্রহাণু থেকে নমুনা পাওয়া আমাদের গবেষণার ক্ষেত্রে একটা বিশাল ব্যাপার। কারণ আমরা মনে করি রায়ুগু হচ্ছে অত্যন্ত প্রাচীন শিলা পাথরে তৈরি গ্রহাণু, যা দিয়ে আমাদের সৌরজগত তৈরি হয়েছে,” তিনি বিবিসি নিউজকে বলছেন।

রায়ুগুর নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে হয়তো জানা যাবে যে কীভাবে পৃথিবীর শুরুর দিকে পানি এবং অন্যান্য উপাদান পৃথিবীতে সঞ্চারিত হয়েছিল।

GiGLovin
GiGLovin Marketplace - Buy Sell Digital Product Safely

দেশ-বিদেশের সকল খবর সবার আগে পেতে কলম কথা এর ইউটিউব চ্যানেল এ সাবস্ক্রাইব করুন

দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।