রাঙামাটির বাঘাইছড়ির পাহাড়ে এবার হলুদের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই হলুদে ভরপুর থাকছে স্থানীয় হাটবাজারগুলো।
পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় এবার হলুদ চাষে সফল হয়েছেন বাঘাইছড়ির চাষিরা। এ ছাড়া কম খরচে, ব্যাপক ফলন হওয়ায় লাভও বেশি। তাই কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে মানোন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে বাঘাইছড়িতে উৎপাদিত হলুদ।
পাহাড়ে উৎপাদিত হলুদের চাহিদা এখন বিশ্বজুড়ে। এই হলুদ রপ্তানি হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
উপজেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হলুদ বহুল ব্যবহৃত একটি মসলাজাতীয় ফসল। তাই চাহিদার সঙ্গে জনপ্রিয়তা বেশি। এ ছাড়া হলুদের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। প্রায় সব ধরনের মাটিতে হলুদ চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি হলুদ চাষের জন্য অতি উত্তম। তাই পাহাড়ে হলুদ চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ডিমলা ও সিন্দুরী নামে হলুদের দুটি উন্নত জাত রয়েছে। ডিমলা জাতটি স্থানীয় জাতের তুলনায় তিন গুণ ফলন বেশি দেয়। আর পাহাড়ে সাধারণত ডিমলা জাতের হলুদ বেশি হয়ে থাকে।
স্থানীয় হলুদচাষি জীবন চাকমা জানান, প্রতিবছর উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ে উৎপাদিত হাজার হাজার টন হলুদ যাচ্ছে সমতলে। চাহিদা বেশি থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা হলুদ নিতে আসছেন পাহাড়ে। তাই কৃষকরা বেশি দামের আশায় পাহাড় থেকে সংগৃহীত হলুদ সিদ্ধ করে রৌদে শুকানোর পর বাজারে নিয়ে আসছেন। আর এসব হলুদের রঙ দেখে ঝুকে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে কষ্টের তুলনায় দাম মিলছে না। যোগাযোগব্যবস্থা অনুন্নত ও পরিবহন সংকটের কারণে সঠিক সময়ে হলুদ বাজারজাত করতে পারছেন না ইউনিয়নের পাহাড়ি কৃষকরা। তাই লাভের চেয়ে ব্যয় খরচ বেশি গুনতে হচ্ছে কৃষকদের বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে প্রতিবছর বাঘাইছড়ির পাহাড়ে কী পরিমাণ হলুদের আবাদ হয় তার সঠিক কোনো তথ্য জানা না গেলেও আগের চেয়ে ব্যাপক হারে হলুদ চাষ বেড়েছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের।
বাঘাইছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. তোফায়েল আহম্মেদ জানান, এ বছর শুধু বাঘাইছড়ি উপজেলায় হলুদের আবাদ হয়েছে ২ হাজার হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার টন। উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষেরা পাহাড়ের ঢালে জুমের ধানের পাশাপাশি হলুদ চাষ করে থাকেন। জুমের মিশ্র ফসলে চাষাবাদের মধ্যে হলুদের চাষ অন্যতম। শুধু বাঘাইছড়ি নয়, সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে হলুদের চাষ এখন ব্যাপক আকারে হচ্ছে।
পাহাড়ে হলুদ বাগানে সবেমাত্র শুরু হয়েছে হলুদ সংগ্রহ করার কাজ। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কিন্তু গত মৌসুমের ন্যায় এ বছরও তেমন ভালো দাম না পাওয়ার কারণে কিছুটা মনক্ষুণ্ন কৃষকরা।
পার্বত্যাঞ্চলের জন্য হলুদ একটি অর্থকরী ফসল। সঠিকভাবে বাজারজাত করা গেলে দাম সংকট নিরসণ করা সম্ভব বলেও মনে করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
রোববার সকালে উপজেলার মসজিদ মার্কেটের খোলা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় হলুদ ব্যাবসায়ী মামুন ও ইউছুপ আলী বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সংগ্রহ করা হলুদ ঢাকা ও চট্টগ্রাম নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়াজাত করছেন। তারা জানান উপজেলার সাপ্তাহিক চারটি হাটে প্রায় দুই কোটি টাকার হলুদের লেনদেন হয়। তবে পরিবহণ খরচ শ্রমিক মজুরি, বাজার ফান্ড, জেলা পরিষদ ফান্ডসহ বিভিন্ন চাঁদার কারণে তাদের মুনাফা তেমন টিকে না।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন পাহাড়ের মাটিতে সোনা ফলে এখানে পরিকল্পনা করে কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা করা গেলে পাহাড়ের অর্থনীতি ও মানুষের ভাগ্য রাতারাতি পরিবর্তন হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।