স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষকদের গত রোববার বিকাল পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকঠাক ছিল। সন্ধ্যার হঠাৎ করে গরম বাতাস। এই বাতাসে হাজারো কৃষকের স্বপ্ন ওলটপালট করে দিয়েছে। পরদিন সকাল থেকে সবুজ ফসলের ধানের শীষ বির্বণ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আচমকা ফসলের ক্ষেতে এ অবস্থা দেখে দিশেহারা কৃষক। ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার ৪২শ হেক্টর ফসলী জমি। কৃষি বিভাগ বলছে ধানের পরাগায়নের সময় হঠাৎ গরম বাতাস এ ক্ষতির প্রধান কারণ। কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন পরাগায়নের আগে-পরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার বেশি হলেই ধানের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যনুযায়ী জেলায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ হয়। গত রোববার জেলার বিভিন্ন উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ো ও গরম হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৪২শ হেক্টর জমির ধান। ক্ষয়ক্ষতি হয় সবজিসহ অন্যান্য ফসলের। গরম বাতাসে জেলার চার হাজার ২০১ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে ত্রিশাল উপজেলার ২ হাজার ২৮৬ হেক্টর, গফরগাঁও ৫০০ হেক্টর, ঈশ্বরগঞ্জ ২৫০ হেক্টর এবং গৌরীপুর ১৬০ হেক্টর, নান্দাইল ২৫০ হেক্টর, ফুলবাড়িয়ায় ২২০ হেক্টর, ভালুকায় ১৫০ হেক্টর, সদরে ৯৫ হেক্টর, মুক্তাগাছায় ১০৫ হেক্টর, ফুলপুরে ১০০ হেক্টর, তারাকান্দায় ৩০ হেক্টর, হালুয়াঘাটে ৪০ এবং ধোবাউড়ায় ১৫ হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আর কিছু দিনের মধ্যেই সোনালী ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন ছিল কৃষকের চোখে। আচমকা ফসলের ক্ষেতে এ অবস্থা দেখে দিশেহারা কৃষক।
জেলার ঈশরগঞ্জ উপজেলার বালিহাটা গ্রামের কৃষক রাসেল মিয়া জানান, রোববার বিকালে জমি ঘুরে দেখেছি। জমিতে পানি দিয়েছি। সোমবার সকালে গিয়ে দেখি আমার এক একর জমিসহ আশপাশের অনেক জমির শীষ শুকিয়ে গেছে। একই গ্রামের বর্গাচাষী আবুল কাশেম জানান, অনেক ধার দেনা করে এক একর জমিতে রোরো ধান রোপন করেছিলাম। সন্তানের মতো জমির প্রতিটি গোছাকে যতœ করেছি। জমির পাশ দিয়ে গেলে প্রশান্তিতে বুকটা ভরে যেত। সোমবারের পর থেকে এখন আর জমিতে যাই না। জমির সব শীষ মরে শুকিয়ে গেছে। সারা ক্ষেতে এক দেড়মন ধান হয় কিনা সন্দেহ। এখন কি করব বুঝতে পারছিনা।
সদর উপজেলার চর ঈশ্বরদিয়ার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, ঝড়ো বাতাসে ধান গাছ পড়ে যায়, হয়তো চিটা একটু বেশি হয়। কিন্তু ক্ষেতের পর ক্ষেতের ধান মরে শুকিয়ে গেছে এমনটা জীবনেও শুনিও নাই দেখিও নাই। এই কুবাতাসে আমাদের সর্বনাশ করে গেল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মতিউজ্জামান জানান, গত ৪ মার্চ ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝড়ো ও গরম হাওয়ায় প্রায় ৪ হাজার ২০১ হেক্টর জমির বোরো ধান আক্রান্ত হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, ধান ক্ষেতে যাতে পানি থাকে। আমারা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা তৈরী করছি। সরকারি সহায়তা পেলে হিট শকে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা দেয়া হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষি বিজ্ঞানী ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, এবার মার্চ মাসের ২য়-৩য় সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। ধানের ফুল আসা বা পরাগায়নের আগে-পরে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হলেই ধানের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর। গরম ঝড়ো বাতাসের কারণে ধানের শীষ শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এখন করার কিছু নেই। এখন চাষী ভাইদের জন্য করণীয় এখন জমিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি ধরে রাখা। এতে করে হিট শক কিছুটা এডজাস্ট করতে পারবে ফেলবে। ক্ষয়ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে I
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।