প্রতি বছর রাজশাহীর বৃহত্তর আমের হাট বসে পুঠিয়ার বানেশ্বরে। এর বাইরে বিভিন্ন মোড়ে মোড়েও আম কেনা বেচা হয়।
আবার বাগান থেকেও সারসরি আম কিনে পাইকাররা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠান। এ বছরও বানেশ্বরে হাট বসেছে। তবে অন্যান্য বার হাটের মাঝখানে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের যে মাঠটি (কাচারি মাঠ) আছে সেখানে তার পরিবর্তে বানেশ্বর সরকারি কলেজ মাঠে বসছে আমের হাট।
এর ফলে অন্যান্য বার আমের এই মৌসুমে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের বানেশ্বর বাজার অংশে যে যানজটের তৈরী হত দিনের বেলা এবার সেটি নাই। বানেশ্বর কাচারি মাঠের সেই কলাহলও নাই।
অন্যদিকে যেখানে হাট বসছে সেই বানেশ্বর কলেজ মাঠেও গত বুধবার দুপুরে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের তেমন সমাগম দেখা যায়নি। অন্যান্য বার যেখানে আমের হাজারো ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড়ে গম গম করতো কাচারি মাঠ, সেখানে বানেশ্বর কলেজ মাঠটি যেন অনেকটায় নিসপ্রাণ ছিল।
আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের দাবি, গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই আমের ভরা মৌসুমেও দাম বাড়ছে না শুধুমাত্র পাইকার ব্যবসায়ী তেমন না থাকায়। ফলে এখনো গুটি বা লখনা জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। যা গতবার ছিল এই সময়ে অন্তত দেড় হাজার টাকা মণ।
এ হাটে আম বিক্রি করতে আসা দুর্গাপুরের মাড়িয়া গ্রামের নাবিউল ইসলাম বলেন, ‘একেবারে শেষ সময়ের দিকে এসেও গুটি ও লখনা জাতের আমের দাম না বেড়ে বরং কমে গেছে গত কয়েকদিনে। শুরুতেই এই আম ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা দরে। অন্যান্য বার শুরুতেই গুটি ও লখনা বিক্রি হত কমপক্ষে ৮০০ টাকা মণ দরে। সেটি গিয়ে দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকাও ঠেকত। এবার সেখানে ৮০০ টাকায় পার হয়নি।’
এ হাটে আম বিক্রি করতে আসা আরেক চাষি বাঘার মকবুল হোসেন বলেন, ‘একেবারে শেষদিকে এসেও গোপাল ভোগ জাতের আম এখনো ২৫০০ টাকা মণ ছাড়াতে পারেনি। অথচ অন্যান্য বার এই সময়ে এই জাতের আম বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০টাকা বা তারও ওপরে। আবার এ সময়ে যেখানে খিরসাপাত বা হিমসাগর বিক্রি হয়ে অন্তত ৩ হাজার মণ দরে সেখানে এখনো এ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে। এর বাইরে ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকা মণ দরে। করোনার কারণে হাটে পাইকাররা না আসায় দাম আমের বাড়ছে না বলেও দাবি করেন তিনি।
একই হাটে আম বিক্রি করতে আসা পুঠিয়ার লোকমান এলাকার দিদারুল বলেন, ‘গত ৮-১০ দিন ধরে আমের পাইকারী ক্রেতা তেমন হাটে আসছে না। ফলে আমরা চাষিরা আম বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে এসে ক্রেতার অভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছি। তার পরে আশানরুপ দাম না পেলেও কোনো এক সময় আম বিক্রি করে হতাশা নিয়েই বাড়ি ফিরছি। কিন্তু অন্যানবার এই সময়ে হাটে আমের ভ্যান ঢুকার সঙ্গে সঙ্গেই পাইকাররা এসে দামাদামি শুরু করে আম নিয়ে টানা-হেঁচড়া করত। কিন্তু এবার ক্রেতার জন্য আম নিয়ে হাটে প্রখর রোদ আর গরমের মধ্যে বসে থাকতে হচ্ছে।’
এই হাটের আড়ৎদার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার তেমন পাইকাররা নামেনি। এ কারণে আমের দাম অনেকটা কম। এই সময়ে যেখানে আমের দাম প্রতিদিন মণে অন্তত ১০০ টাকা করে বাড়ে। সেখানে কোনো কোনো দিন দাম কমে যাচ্ছে। চাষিরা আম নিয়ে এসে ক্রেতার ওভাবে বসে থেকে সময় কাটাচ্ছেন।’
আরেক আড়ৎদার আসগর আলী বলেন, ‘গত বছরও এই সময়ে প্রতিদিন অন্তত ৫০ ট্রাক আম বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এবার ২৫ ট্রাক আমও সহজে বিক্রি হচ্ছে না। শুরুর দিকে বেশকিচু পাইকাররা এলেও হঠাৎ করে গত ৮-১০ দিন ধরে কমে গেছে। এ কারণে আমের দামও তেমন উঠছে না।’
বানেশ্বর হাটে কথা হয়, পাইকারী ব্যবসায়ী মহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গতবারও করোনা ছিল। কিন্তু আমের দাম কম ছিল না। তবে এবার কেন জানি করোনার কারণে আমের দামের ওপরেও প্রভাব পড়েছে। আমরা বাড়তি দামে আম কেনার সাহস পাচ্ছি না। ঢাকা বা চট্টগ্রামের আড়তেও ৭০-৮০ টাকার ওপরে আম বিক্রি করা যাচ্ছে না। কিন্তু অন্যান্যবার এই সমেয় গোপাল ভোগ, হিমসাগর বা ল্যাংড়া ৮০-১০০ টাকা কিনতে হয়েছে বাজার বা বাগান থেকেই।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।