প্রাচীনকাল থেকেই হত্যাকে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয় । আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে দীর্ঘ মেয়াদী জেল বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
আত্মরক্ষার অধিকার সব মানুষের আছে এবং এই আত্মরক্ষার জন্য যেকোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারবেন এবং এ ধরণের খুন কোন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।
আত্মরক্ষার এই বিষয়গুলো দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১০০ ও ১০৩ ধারায় বর্নিত আছে। এই ধারা অনুযায়ী আপনি নিজের বা সম্পত্তির সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য কোনো অপরাধ করে থাকলেও আপনাকে এর জন্য শাস্তি পেতে হবে না। কারণ আপনার অধিকার আছে, কোনো আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচার জন্য কোনো প্রতিরোধ তৈরি করা।
যেমন যে মুহূর্তে আপনি অথবা আপনার সম্পত্তি আক্রান্ত অথচ তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হওয়া আপনার পক্ষে সম্ভব নয় তখন আপনি আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৯৬ ধারা থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত আত্মরক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ৯৬ ধারা অনুযায়ী ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার জন্য আপনি কোনো অধিকার প্রয়োগ করে থাকলে আপনার করা কোনো কাজই এমনকি হত্যাও আইনে অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
৯৭ ধারায় রয়েছে, মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর এমন যে কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে নিজের ও অন্যের শরীর রক্ষার অধিকার আপনার আছে। চুরি, দস্যুতা, অনিষ্ট সাধন বা অনধিকার প্রবেশের মাধ্যমে নিজের বা অন্য ব্যক্তির স্থাবর কিংবা অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার জন্যও আপনি এই প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
৯৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, অক্ষম বা মাতলামির কারণে কেউ কোনো অপরাধ করলে তার সেই কাজের জন্য তাকে অপরাধী করা যাবে না। কিন্তু এমন মানসিকভাবে অক্ষম, বিপর্যস্ত ব্যক্তির হাত থেকে আপনার যুক্তিসঙ্গত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে। একইভাবে ভুল ধারণায় বা না জেনে কেউ যদি আপনাকে আক্রমণ করে, তার বিরুদ্ধেও আপনার আত্মরক্ষার অধিকার থাকবে।
১০০ ধারায় আছে, কোনো ক্ষেত্রে আপনি আত্মরক্ষা করতে গিয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারেন। আর এগুলো হলো-
১)নিজের নিশ্চিত মৃত্যু ঠেকাতে,
২)মারাত্মক আঘাত থেকে রক্ষা পেতে যেখানে পরবর্তীকালে আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন সম্ভাবনা রয়েছে,
৩)ধর্ষণ বা অস্বাভাবিক কাম লালসাথেকে বাঁচতে, ৪)অপহরণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ও
৫)কেউ যদি আপনাকে এমনভাবে আটক করতে পারে বলে মনে হয় যেখান থেকে আপনি সরকারি কর্তৃপক্ষের যেমন পুলিশ বা র্যাবের কাছ থেকে আর কোনো সাহায্য নিতে পারবেন না।
১০৩ ধারায় উল্লেখ আছে, কখন আপনি সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে কারো মৃত্যু ঘটাতে বা অন্য কোনো ক্ষতি করতে পারেন। এগুলো হলো-
১)দস্যুতার শিকার হলে,
২)কেউ রাতে অপথে গৃহে প্রবেশ করলে,
৩)বাসা বা সম্পত্তি সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বিল্ডিং, তাঁবু, জাহাজে আগুন লাগার ক্ষতি এড়াতে।
৪)এছাড়াও চুরি, অনিষ্ট বা ঘরে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে যদি এমন কোনো অবস্থার উদ্ভব হয় যে সেখানে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করা না হলে কারো মৃত্যু বা গুরুতর আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তখন।
১০৫ ধারায় আছে, কখন কারো সম্পত্তি রক্ষার ক্ষেত্রে এই অধিকারের শুরু হয় এবং কতক্ষণ পর্যন্ত এই অধিকার অব্যাহত থাকবে। যেমন কারো সম্পত্তির ক্ষেত্রে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরক্ষার অধিকার শুরু হবে। চুরির ক্ষেত্রে চোর পালিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত বা সরকারি কর্তৃপক্ষের সাহায্য লাভ না করা পর্যন্ত অথবা ওই সম্পত্তি উদ্ধার না করা পর্যন্ত আপনার প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে।
দস্যুতার ক্ষেত্রে দস্যুর দ্বারা কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো বা আঘাত করা বা অবৈধ অবরোধের চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত প্রতিরক্ষার অধিকার থাকবে। অনুপ্রবেশ বা অনিষ্ট সাধনের ক্ষেত্রে এর চেষ্টা অব্যাহত থাকা পর্যন্ত আর রাতের বেলা চুরির ক্ষেত্রে যতক্ষণ পর্যন্ত ঘরে কোনো অনুপ্রবেশকারী থাকবে আপনার ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার ততক্ষণ পর্যন্ত থাকবে। চোর চুরি করে চলে যাওয়ার পর আপনার আর ওই অধিকার থাকবে না।
আপনার মৃত্যু হতে পারে এমন কোনো আক্রমণে আত্মরক্ষার জন্য যদি কোনো নিরাপরাধ মানুষেরও ক্ষতির ঝুঁকি থাকে তাহলেও আপনি এমন ঝুঁকি নিয়ে আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে আইন অনুযায়ী কোনো বাঁধা নেই। যেমন আপনি নিজেকে বাঁচাতে কোনো উচ্ছৃঙ্খল জনতার ওপর গুলি চালাতে পারেন। এতে যদি ওই জনতার মধ্যে থাকা কোনো শিশুও আহত বা নিহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে তাহলেও ১০৬ ধারা অনুযায়ী আপনি দায়ী হবেন না।
লেখক: মোঃ রোকনুজজামান, আইনজীবী
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।