সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে চট্টগ্রামে পাঁচ হাজারেরও বেশি জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করেছে একটি হ্যাকার চক্র।

এ চক্রের চার সদস্যকে সোমবার অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারের পর এই তথ্য জানতে পারে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে হ্যাকার চক্রের আদ্যোপান্ত জানান কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৮ থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫টি ওয়ার্ডের আইডি ব্যবহার করে সার্ভারে অনুপ্রবেশ করে ৫৪৭টি জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়। গত শনিবার বিষয়টি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের পক্ষ থেকে থানাগুলোতে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপরই অনুসন্ধানে নামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এ ঘটনায় সোমবার পাঁচজনকে আটকের পর যাচাই-বাছাই করে চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গ্রেপ্তাররা হলেন-মোস্তাকিম (২২), দেলোয়ার হোসাইন সাইমন (২৩), আব্দুর রহমান আরিফ (৩৫) ও ১৬ বছরের এক কিশোর। নগরের খুলশী থানার পাহাড়তলী ওয়ার্ডে আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় এই চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপকমিশনার মোহাম্মদ মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হ্যাকার চক্রের সদস্য। তাদের কাজ ছিল মাঠপর্যায়ে জন্মনিবন্ধন-প্রত্যাশীদের ডাটা এন্ট্রি করে হ্যাকার গ্রুপের পরের পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া।

মূল হ্যাকার পরে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন সার্ভারে প্রবেশ করে একটি জাল জন্মসনদ প্রস্তুত করে পুনরায় চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠাতেন। ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার বিনিময়ে তারা রোহিঙ্গাসহ বিভিন্নজনকে এই সনদ তৈরি করে দিতেন।’ মূল হ্যাকারকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলেও জানান কাউন্টার টেররিজমের এই উপকমিশনার।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৪টি সিপিইউ, ৩টি মনিটর, ১টি স্ক্যানার ও প্রিন্টার এবং ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। এসব ডিভাইস প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করে হ্যাকিংয়ের অসংখ্য আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মনজুর মোরশেদ আরও বলেন, ‘ফেসবুকে জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরির বিষয়ে বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপে প্রবেশ করে যারা ভুয়া জন্মনিবন্ধন করতে আগ্রহী, তাদের চক্রের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়।

এ ছাড়া মাঠপর্যায়েও গ্রাহক সংগ্রহ করে থাকে চক্রের অন্য সদস্যরা। এ পর্যন্ত চক্রটি ৫ হাজারের বেশি ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি ও বিতরণ করেছে বলে জানতে পেরেছি। সারা দেশে একাধিক চক্র ছড়িয়ে রয়েছে। একেকটি চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ১০০।’

জন্মসনদ পাওয়াদের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিক থাকতে পারেন আশঙ্কা করে মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, আইডি হ্যাক করে যেসব ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিক থাকতে পারে।’ তবে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কারোর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দীনসহ অন্যরা।