প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার নিম্নবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এ সময় সবাইকে সতর্ক করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ একটু ভালো থাকতে শুরু করে তখনই দেশে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত শুরু হয়ে যায়।

আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভার শুরুতে এসব কথা বলেন সরকার প্রধান। গণভবন থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি।

তিনি বলেন, ‘মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলোকে সহনীয় পর্যায়ে কীভাবে নিয়ে আসতে পারি সেই ব্যবস্থা আমাদের নেওয়া একান্তভাবে জরুরি বলে আমি মনে করি। কারণ, মানুষের জন্যেই তো রাজনীতি করি। মানুষ কষ্ট পেলে আমারও কষ্ট হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি যে তেলের দাম বাড়ানোর ফলে নিত্যপণ্যের দামও বেড়ে গেছে। মানুষের কষ্ট হচ্ছে। যারা নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা ফিক্সড ইনকাম যাদের, নির্দিষ্ট আয়ে যাদের চলতে হয় তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারি।’

সাধারণের কষ্ট লাঘবে ১৫ টাকা কেজিতে ৫০ লাখ মানুষকে চাল কেনার সুবিধার পাশাপাশি প্রায় এক কোটি ‘বিশেষ পারিবারিক কার্ড’ দিয়ে ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষগুলো কষ্ট না পায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে এবং তারপরে স্যাংশন এবং পাল্টা স্যাংশন। এর ফলে দেখা গেল আমাদের কেনার সামর্থ্য থাকতেও সবকিছু ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেল।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যখন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পড়ে তুলে একে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন তখনই ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের আঘাতটা আসে। যখন দেশের অগ্রগতির পথে অগ্রযাত্রা শুরু হলো তখনই আঘাতটা আসলো।’

তিনি ’৭৪ এর দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হবার পর যখন দেশের মাটি ও মানুষ ছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই ছিল না, সেই ’৭২ বা ’৭৩ সালে কিন্তু দুর্ভিক্ষ হয়নি। হয়েছে ’৭৪ সালে। নগদ অর্থ দিয়ে কেনা খাদ্যের জাহাজ কিন্তু বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হয়নি।’

দেশ গড়ার কাজে দিনরাত ব্যস্ত জাতির পিতাকে কোনো সময় যেমন দেওয়া হয়নি, তেমনি ‘দেশ বিরোধীদের অপপ্রচার ছিল তুঙ্গে’ এমন অভিমত ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’নানা ধরনের প্রচারণা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকেও হত্যা করা শুরু করে। পাবনা ও খুলনায় আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে হত্যা করা হলো।’

জাতির পিতা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের বিচার শুরু করলেও অনেকেই তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায় বলেও তিনি জানান এবং মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জাতির পিতার বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঔপনিবেশিক প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙ্গে একটি গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং তৃণমূলের ক্ষমতায়নে তিনি সকল মহকূমাকে জেলায় রুপান্তরিত করে জেলাভিত্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।’

দেশের উন্নয়নে জাতির পিতার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নতি করাই ছিল তার লক্ষ্য।’

শেখ হাসিনা এ সময় আবারো নিজেদের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী ফেলে না রেখে সবাইকেই কিছু না কিছু উৎপাদন করতে হবে যেন, সাধারণ মানুষের জীবন কষ্টে না কাটে।’