ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী শহর জুরাভিসের একটি ক্যাম্পে পাঁচ বাংলাদেশিকে আটক রাখা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দেশের নারী-শিশুসহ আরও ১২০ জন রয়েছেন। তাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করতেই আটকে রেখেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন জানান, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ৫ বাংলাদেশিকে আটকে রেখেছে, এ তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। বেশিরভাগ বাংলাদেশিকে পোল্যান্ডে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সেনাক্যাম্পে আটকেপড়া ৫ বাংলাদেশির বিষয়েও তথ্য যাচাই করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নিরাপদ জায়গায় যাওয়া তো দূরে থাক, তারা এই ক্যাম্প থেকে বেরই হতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) একটি সংবাদমাধ্যমকে ক্যাম্পে আটকে থাকাদের একজন রিয়াদ মালিক বলেন, এই ডিটেনশন সেন্টারে আগে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সেগুলো আর নেই। খাবার, পানি, বিদ্যুতসহ সব বিষয়েই সংকট চলছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে, ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমার এই ফোনটি লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমরা কোনো মিডিয়ার সঙ্গে যেন কথা বলতে না-পারি, সে জন্যই আমাদের ফোন তারা জব্দ করেছে।
রিয়াদ মালিক বলেন, আমাদেরকে তারা এখানে আটকে রেখেছে, জিম্মি করে রেখেছে। তারা আমাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। ঠিকমতো খেতেও দেওয়া হচ্ছে না।
ক্যাম্পটি পরিচালনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এখানে থাকা সবার অবস্থাই খারাপ বলে দাবি করেন এই বাংলাদেশি।
তিনি বলেন, আমাদের এই ক্যাম্পের চারপাশে ইউক্রেন সামরিক বাহিনীর অনেক সদস্য জড়ো হয়েছেন, প্রায় ৫ হাজারের মতো হবে। রাশিয়া বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র মারলে আমরা সবাই মারা যাব। তখন ইউক্রেন বলবে, রাশিয়া বেসামরিক নাগরিক হত্যা করছে। আমরা এখন মানব ঢালে পরিণত হয়েছি।
ক্যাম্প থেকে বোমাবর্ষণ ও গুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছেন তারা। এখন পর্যন্ত কোনো আঘাত না এলেও নিশ্চিত মৃত্যুর জন্যই যেন দিন গুনছেন তারা।
উন্নত জীবনের খোঁজে ইউরোপ পাড়ি দিতে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন রুট ব্যবহার করেন। তার মধ্যে অন্যতম রাশিয়া। রাশিয়া থেকে ইউক্রেন হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করা যায়। এই রুট ধরেই ইউরোপের উদ্দেশে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন রিয়াদ।
ইতিমধ্যে পোল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন রিয়াদ মালিক। কিন্তু সেখান থেকে সব শুনে ‘ঠিক আছে’ বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কি না; তা তাদের জানানো হয়নি।
রিয়াদ মনে করেন, তাদের এখান থেকে উদ্ধার করার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ দরকার। সরকার যদি রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলে, যেভাবে নাবিকদের উদ্ধার করা হলো সেভাবে আমাদের উদ্ধার করতে পারে। পোল্যান্ড দূতাবাস কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না।
আতঙ্কগ্রস্ত এই যুবক জানান, পুরো কিয়েভ, কারকিভসহ সব পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এত বোমা মারা হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।