মোঃ এনামুল হক, লোহাগড়া স্টাফ রিপোর্টার: কোভিড-১৯ এর সংক্রমনের কারনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বপ্ন পরিসরে জেলা প্রশাসন ও শিল্পী এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন। নড়াইল এর উদ্দোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যদায় মহান এই শিল্পীর জন্মজয়ন্তী উদ্যাপিত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে এস এম সুলতান কমপ্লেক্স কোরআন খতম,শিল্পীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পন স্মৃতিচারন,জিয়ারত ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।জেলা প্রশাসন ও শিল্পী এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন নড়াইল এর পক্ষ থেকে শিল্পীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন জনাব মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান,জেলা প্রশাসক নড়াইল।

এছাড়া জেলা পুলিশ নড়াইল প্রেসক্লাব জেলা শিল্পীকলা একাডেমী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ সরকারী ও বেসরকারি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শিল্পীর সমাধিতে শ্রদ্ধান্জলী নিবেদন করা হয়।

এসময় অন্যান্যদের মাঝে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার জনাব প্রবীর কুমার রায় পিপিএম বার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস পৌর মেয়র জনাব আন্জুমান আরা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) জনাব মোঃ ফকরুল হাসান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট জনাব সুমী মজুমদার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) জনাব দেবাশীষ চৌধুরী, নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সাদিয়া ইসলাম,সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও জেলা শিল্পীকলা একাডেমীর সাধারন সম্পাদক মলয় কুমার কুন্ডু,নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবির টুকু, এসএম সুলতান শিশুচারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শেখ হানিফ। জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন ১৯২৪ সালের এই দিনে রুপালী চিত্রার পাড়ের নিভৃত পল্লী মাছিমদিয়ার এই শিল্পীর জন্ম।

১৯২৪ সালের ১০ আগষ্ট শিল্পি সুলতান নড়াইল শহরের মাছিমদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।রাজমিস্ত্রি পিতা মেছের আলীর নান্দনিক সৃষ্টির ঘর্ষামাজার মধ্য। দিয়ে ছোটবেলার লাল মিয়া(সুলতান) চিত্রাংকনে সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ হয়।অষ্টম শ্রেনিতে পড়াকালীন লাল মিয়া নড়াইলের তৎকালিক জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের সুদৃষ্টিতে পড়েন।তিনি সুলতানকে কলকাতায় নিয়ে নিয়ে খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ও শিল্প সমালোচক কলকাতা সোহরাওয়ার্দির সঙ্গ পরিচয় করিয়ে দেন।

একাডেমীক যোগ্যতা বিচার না করেই ১৯৪১ সালে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় অষ্টম শ্রেনী পাস এবং সুলতানকে কলকাতা আর্ট কলেজে ভর্তি করা হয়।১৯৪৪ সালে কলেজের তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনিতে প্রথম স্হান দখল করে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হন শিল্পি সুলতান।

শিশু কিশোেরপ্রেমী সুলতান ১৯৮০ সালে নিজ বাড়িতে শুরু করেন শিশুস্বর্গের নির্মানকাজ। তিনি নিজ উদ্দ্যেগে ১৯৯২ সালে ৯ লাখ মতান্তরে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্তরে ভ্রাম্যমান শিশুস্বর্গ নামে দ্বিতলা নৌকা নির্মান করেন।নৌকায় তিনি শিশুদের নিয়ে চিত্রানদীতে ভ্রমন করতেন এবং নৌকায় বসেই তাদের চিত্রাংকন শেখাতেন।সুলতানের শিল্পিকর্মের বিষয়বস্তু ছিল বাংলার কৃষক,জেলে,তাঁতি,কামার, কুমার,মাঠ,নদী,হাওর বাওড়,জঙ্গল, সবুজ,প্রান্তর ইত্যাদি।

মুক্ত বিহঙ্গের মতো ৭০ বছরের যাপিত জীবনে প্রান ও প্রকৃতির শিল্পি সুলতান তুলির আঁচড়ে চিরায়ত বাংলার রুপ রস গন্ধ আর ঘামে ভেজা মেহনতি মানুষের সঙ্গে নিজেকে বিলিন করে সৃষ্টি করেন ভুবনখ্যাত সব ছবি,রেখে যান সাধারনের মাঝে অসাধারন হয়ে ওঠার অন্যন্যা ইতিহাস,মানবপ্রেমের আর্দশ।যে আর্দশ অনাগত শিল্পিদের গভীর জীবনবোধ থেকে নিঃস্বার্থভাবে শিল্পি সৃজনের নিরন্তর প্রেরনা যোগাবে।