জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৯১ তম জন্মদিন আজ ৮ আগস্ট।
১৯৩০ সালের এ দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ফজিলাতুননেছা। তার বাবার নাম শেখ জহুরুল হক ও মায়ের নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ আবুল কাশেম নাতনির নাম রাখেন ফজিলাতুননেছা। ফুলের মতো গায়ের রং বলে মা হোসনে আরা বেগম ডাকতেন রেণু বলে। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। শৈশবে মা-বাবাকে হারানোর পর ফজিলাতুননেছা বেড়ে ওঠেন দাদা শেখ কাশেমের কাছে। সম্পর্কে তিনি জাতির পিতার আত্মীয় হতেন। খুব অল্প বয়সেই বিয়ে হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছার। শেখ বাড়িতে শ্বশুর-শাশুড়ি ও দেবর-ননদের সঙ্গেই তিনি বেড়ে ওঠেন।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের অনন্যসাধারণ ভূমিকা ছিল। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে পর্দার অন্তরালে থেকে তিনি পরামর্শ, সাহস, অনুপ্রেরণা ও সব কাজে সহযোগিতা দিয়ে গেছেন। বঙ্গমাতার অবদান সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকা-পয়সা জোগাড় করে রাখত, যাতে আমার কষ্ট না হয়।’
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ প্রেক্ষাপটে নেপথ্যে থেকে বেগম মুজিব অসামান্য অবদান রেখেছেন। তিনি দুঃসময়ে প্রেরণা জুগিয়েছেন ও পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী হয়ে তার প্রতিটি কাজে প্রেরণার উৎস হয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির পিতার সঙ্গে বুলেটের নির্মম আঘাতে জীবন দিতে হয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে।
স্ত্রীর প্রতি জাতির পিতার ভালোবাসার প্রকাশ আমরা দেখতে পাই তার বিভিন্ন লেখায়। তিনি লিখেছেন, ‘রেণু তো নিশ্চয় পথ চেয়ে বসে আছে। সে তো নীরবে সকল কষ্ট সহ্য করে; কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরো বেশি ব্যথা লাগে।’
বঙ্গবন্ধুর প্রতি বেগম মুজিবের গভীর ভালোবাসার কথাও উঠে এসেছে অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পাতায়। বিদায় দেওয়ার একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘রেণু আমাকে বিদায় দেওয়ার সময় নীরবে চোখের পানি ফেলছিল। আমি ওকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম না, একটা চুমো দিয়ে বিদায় নিলাম। বলবার তো কিছুই আমার ছিল না, সবই তো ওকে বলেছি।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু কী বলবেন, তা নিয়ে যখন অনেক আলোচনা, সেই ক্রান্তিলগ্নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন আমার মা। বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে আমার মাকে দেখেছি, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি তিনি নিতে পারতেন। ৭ মার্চের ভাষণের সময়ও মা বলেছিলেন, তুমি সারাটা জীবন মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছ। তুমিই সবচেয়ে ভালো জানো, কী বলতে হবে। তোমার মনে যা আছে, তাই বলো।’
সরকার ‘বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব’ পদক প্রবর্তন করেছ রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া; সমাজসেবা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, কৃষি ও পল্লি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য ২০২১ সাল থেকে পাঁচজন বাংলাদেশি নারীকে এই পদক প্রদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতার জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীতদের হাতে পদক, সনদ ও শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেবেন। ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব’ পদকটি নারীদের জন্য ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক হিসেবে গণ্য হবে।
২০১৭ সালের ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের জন্মদিন জাতীয়ভাবে পালনের সুপারিশ করে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের পর বঙ্গমাতার জন্মদিন জাতীয়ভাবে পালন হয়ে আসছে।
মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৯১ তম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।