‘হত্যাসহ ১৫টি মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজ বাহিনীর মূলহোতা রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজ। একইসঙ্গে তিনি একজন পেশাদার কিলার।
তিনি নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র ব্যবসাও করে আসছিলেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য শুটার রিয়াজ একটি বাহিনীও গড়ে তোলেন। আধিপত্য ও শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজিসহ এই এলাকায় মাদকের কারবার পরিচালনা করতেন রিয়াজ। শুধু তাই নয়, কম বয়সীদের অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের সন্ত্রাসী কাজের জন্য দলে যুক্ত করতেন ওই শুটার রিয়াজ। ’
সম্প্রতি গত ২৯ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হয়। হামলায় আরও ২০ জন আহত হয়। সেসময়ে এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।
এর আগে, ১৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব-শত্রুতার জেরে শফিক ও শামীম মল্লিক নামে দুই ব্যক্তিকে তাদের বাসার সামনে অতর্কিতভাবে এলোপাতাড়ি গুলি করেন। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব-শত্রুতার জেরে বিদ্যুৎ এর বাড়িতে এসে তাকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিও করেছিলেন ওই শুটার রিয়াজ। গুলিটি বিদ্যুৎ এর বাড়ির পাশের একটি মেয়ের চোখে গিয়ে লেগে। এতে মেয়েটির একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পরে ভুক্তভোগীরা মামলা করলে বাদী ও সাক্ষীদেরও হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করেন। এছাড়াও গত ৭ নভেম্বর রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়। এসব ঘটনা পর্যলোচনা করে র্যাব ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। ধারাবাহিকতায় বুধবার (৬ এপ্রিল) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পেশাদার কিলার ও অবৈধ অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজুল ইসলাম ওরফে শুটার রিয়াজসহ (২২) তার চার সহযোগীকে গ্রেফতার করে র্যাব। গ্রেফতার বাকি সহযোগীরা হলেন- মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা (২৩), মারুফ হোসেন মুন্না (২৩), মো. সেলিম (২৩), মাহবুব মিয়া (২৩)। অভিযানে তিনটি বিদেশি পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন, ১২ রাউন্ড গুলি, ৫টি ধারালো দেশীয় অস্ত্র, একটি মোটরসাইকেল এবং ৬শ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রিয়াজ বাহিনীতে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে। তারা শুটার রিয়াজের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য প্রায় সময় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতেন। এছাড়াও রিয়াজের নেতৃত্বে এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ও অস্ত্রের কারবার পরিচালনা করতেন। কেউ যদি রিয়াজ বাহিনীকে চাঁদা দিতে না চাইতো তাহলে ভুক্তভোগীদের ওপর হামলা ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখানো হতো।
তিনি বলেন, রিয়াজের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী দল এসব এলাকার বালু ভরাট ও মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে তার দল চাঁদা নিতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, শুটার রিয়াজ সোনারগাঁয়ের একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া সময় ২০১৬ সালে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়। রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও ভাড়ায় মারামারি করতে গিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে অপরাধ জগতের লোকজনের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে তোলেন তিনি। পরে রিয়াজ নিজেই একটি সশস্ত্রী বাহিনী গড়ে তোলেন। অবৈধ অস্ত্র জোগার করে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এছাড়া তিনি উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদেরকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত করতেন। রিয়াজের বড় ভাই মোহাম্মদ আলীও এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত। এখন তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেফতার শুটার রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা ও বেশ কয়েকটি জিডি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। রিয়াজের সহযোগী মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে কালা ভাগিনা, রিয়াজ বাহিনীর প্রধান সহযোগী। তিনি রূপগঞ্জের একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। আগে তিনি সবজির ব্যবসা করতেন। ২০১৯ সালে রিয়াজের সঙ্গে পরিচয় হলে রিয়াজ তাকে তার সশস্ত্র বাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি রিয়াজের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। রিয়াজ বাহিনীর অবৈধ অস্ত্র তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে হেফাজতে রাখতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি ও বিস্ফোরক আইনে রুপগঞ্জ থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। এসব ঘটনায় তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন।
তিনি বলেন, রিযাজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মারুফ হোসেন মুন্না। তিনি সোনারগাঁয়ের একটি বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি সোনারগাঁ এলাকায় মাটি কাটার ব্যবসা করতেন। মাটির ব্যবসা করতে গিয়ে ২০২১ সালে তিনি রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেয়। মাদক সংগ্রহ, সরবরাহ ও অস্ত্র সরবরাহের কাজে তিনি রিয়াজকে সহযোগিতা করতেন। তার নামে রূপগঞ্জ থানায় দুটি মাদক মামলা রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাবরণ করেন।
অপরদিকে মাহবুব মিয়া রূপগঞ্জের একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। তিনি রূপগঞ্জ এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা করতেন। ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি রিয়াজের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিতেন। এদিকে গ্রেফতার সেলিম সোনারগাঁয়ের একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ২০১৬ সালে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে যায়। সেখানে মসজিদে কার্পেট বিছানোর কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে এসে রিয়াজ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।