সীতাকুণ্ডসহ সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে রহস্যজনক মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি মহল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সজাগ থাকার পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা জোরদারে সশস্ত্র, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্তক থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বুধবার সকালে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে যে কাজটা (পদ্মা সেতু নির্মাণ) আমরা সম্পন্ন করেছি, যারা এর বিরোধিতা করেছিল তাদের কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে।

‘কিছু কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। যেমন: একটা ঘটনা ঘটানো হবে, যেন ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। কী করবে তা জানি না, তবে ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন, এমনকি সীতাকুণ্ড যে আগুনটা, সেটাও কিন্তু একটা জায়গা থেকে আগুন ধরে, কিন্তু বিক্ষিপ্ত বিক্ষিপ্ত কয়েকটা জায়গায় একসঙ্গে আগুন ধরে কীভাবে?

‘আর রেলে আগুনটা এটা কিন্তু আমরা একটা ভিডিও পেয়েছি নিচের দিক থেকে। রেলের চাকার কাছ থেকে আগুন জ্বলছে। এটা কী করে হয়? নিশ্চয়ই জিনিসগুলো রহস্যজনক।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য আমি বলব, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দিকেও সবার নজর দিতে হবে, নিরাপত্তা দিতে হবে।’ পদ্মা সেতু নির্মাণ ঘিরে ষড়যন্ত্রের বিষয়টিও আবারও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।

তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্ব ব্যাংক আমাদের টাকাটা (পদ্মা সেতু নির্মাণে) বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি তখন ঘোষণা দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করব। যেদিন নিজের টাকায় করতে পারব, সেইদিনই করব। ‘কাজেই খুব স্বাভাবিক, অনেকেই ভেবেছিল, এটা বোধ হয় আমরা কোনো দিন করতে পারব না, কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমি বলব, এখন সবাইকে যেহেতু এখানে আমাদের বিজিবি, পুলিশ সবাই উপস্থিত আছেন, একটা জিনিস বলব, আপনাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে।’

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হাইটেক পার্ক করে দিচ্ছি, ইনকিউবেটর, কম্পিউটার ল্যাব করে দিয়ে আমরা প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে নজর দিয়েছি। পাশাপাশি, স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি। আমাদের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র আমরা নির্মাণ করে যাচ্ছি।

‘আমাদের চলাচল সুবিধার জন্য মেট্রোরেল আজকে সেটাও দৃশ্যমান, এক্সপ্রেসওয়ে আমরা করে দিচ্ছি, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। কাজেই এখানে আমাদের বাহিনীর প্রধানরা যারা আছেন, আমাদের এই ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নিতে হবে কীভাবে আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা বিধান করতে পারি।’

দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল সক্রিয় বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, যখনই আমরা এগিয়ে যাই, তখনই কিন্তু নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা কোনো কোনো মহল করে থাকে। সেটা হচ্ছে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।

‘সে জন্য সবাইকে সবসময় সজাগ থাকার জন্য আমি অনুরোধ জানাব। যেহেতু এখানে আমাদের তিন বাহিনীর প্রধান আছেন, পুলিশপ্রধান আছেন, অন্যান্য বাহিনী প্রধানরা আছেন, সে জন্যেই বললাম প্রত্যেককে কিন্তু এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।’ প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি আমাদের উন্নয়নের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। আবার যারা বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদেরও কিন্তু সুযোগ করে দেয়। কাজেই সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

প্রযুক্তি ব্যবহারে এসএসএফকে যথেষ্ট শক্তিশালী করার পাশাপাশি অন্য বাহিনীগুলোর জন্যও কাজ করা হচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সেগুলো আমাদের দমন করতে হবে।’

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনী এত সজাগ ও সচেতন যে, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিলG তারপর থেকে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের প্রত্যেকটা বাহিনী—সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব বা আনসার ভিডিপি, আমাদের বিজিবি, প্রত্যেকে কিন্তু দায়িত্ব পালন করেছে।

‘এর ফলে আমরা এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ এবং দমন করতে পেরেছি। এ ব্যাপারে আমাদের আরও সবসময় সচেতন থাকতে হবে।’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান।