দেশের মোবাইল অপারেটর কর্তৃক আনলিমিটেড (মেয়াদবিহীন) ডাটা প্যাকেজ এবং নিরবচ্ছিন্ন মাসিক ইন্টারনেট প্যাকেজের উদ্বোধন করা হয়েছে।

গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনা করে আনলিমিটেড (মেয়াদবিহীন) ডাটা প্যাকেজ এবং নিরবচ্ছিন্ন মাসিক ইন্টারনেট প্যাকেজ সেবা চালু করেছে দেশের সব মোবাইল অপারেটর।

ঢাকার রমনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) প্রধান সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) সকালে এ সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

এ সময় মোবাইল অপারেটররা শর্ত সাপেক্ষে দুটি বিশেষ ডাটা প্যাকেজ চালু করে। প্যাকেজ দুটির নাম হলো: আনলিমিটেড (মেয়াদবিহীন) ডাটা প্যাকেজ ও নিরবচ্ছিন মাসিক ইন্টারনেট প্যাকেজ।

শর্তের মধ্যে আছে, এই দুই প্যাকেজের মাধ্যমে গ্রাহক শুধু ডাটা সেবা পাবেন। অন্য কোনো অফার (ভয়েস, এসএমএস, সোশ্যাল প্যাক) দেয়া হবে না।

নিয়মিত প্যাকেজ, গ্রাহককেন্দ্রিক বিশেষ প্যাকেজ এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্যাকেজ মিলিয়ে ৯৫টি প্যাকেজের আওতামুক্ত থাকবে এটি।

এই প্যাকেজের নামকরণে U এবং মেয়াদে X অক্ষর ব্যবহৃত হবে। যেমন উদাহরণ: গ্রামীণফোনের জন্য GPU220001X, রবির ক্ষেত্রে RBU220001X, বাংলালিংক হলে BLU220001X এবং টেলিটকের ক্ষেত্রে TTU20001X।

প্যাকেজগুলো নামকরণে আনলিমিটেড বা মেয়াদবিহীন বলা হলেও কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে এক বছর।

প্যাকেজগুলো মেয়াদবিহীন ডাটা বা সীমাবিহীন ভলিউমের হওয়ায় অব্যবহৃত ডাটা থাকার সুযোগ নেই। তাই এসব প্যাকেজে ডাটা ক্যারিফরওয়ার্ড প্রযোজ্য হবে না।

এর আগে চলতি বছরের ১৫ মার্চ মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোকে ডাটা ও ডাটাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্যাকেজ সম্পর্কিত নতুন নির্দেশিকা চালু করেছিল বিটিআরসি।

শুরুতে ডাটা প্যাকেজ সর্ম্পকে বিশদ উপস্থাপনা পেশ করেন কমিশনের সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।

তিনি বলেন, গ্রামীণফোনের আনলিমিটেড (মেয়াদবিহীন) ডাটার মূল্য ১৫ জিবি ১০৯৯ টাকা এবং ৫ জিবি ৪৯৯ টাকা, রবির ১০ জিবি ৩১৯ টাকা, বাংলালিংকের ৫ জিবি ৩০৬ টাকা, টেলিটকের ২৬ জিবি ৩০৯ টাকা এবং ৬ জিবি ১২৭ টাকা।

এ ছাড়া গ্রামীণফোনের নিরবচ্ছিন্ন ৩০ দিনের (দৈনিক সর্বোচ্চ ১ জিবি পর্যন্ত) প্যাকেজ ৩৯৯ টাকা এবং ৩০ দিনের (দৈনিক সর্বোচ্চ ২ জিবি পর্যন্ত) ৬৪৯ টাকা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিশ্ব যখন ফাইভজি যুগে প্রবেশ করেছে, তখন বাংলাদেশও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফাইভজি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।

আগামীতে ব্যান্ডউইথের চাহিদা আরও অনেক বাড়বে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গ্রাহক যাতে ডাটার ব্যবহার করে সরকারের ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পার, সে লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, গ্রাহক স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিটিআরসি আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।

আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ চালুর উদ্যোগ নেয়ায় বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে অ্যামটবের মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ বলেন, টেলিকম অপারেটররা সব সময় গ্রাহকবান্ধব এবং সর্বোত্তম সেবা দেয়ার চেষ্টা করে।

টেলিকম খাতে যেকোনো সেবা চালু করতে অপারেটরদের প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করতে হয় বলে জানান তিনি। বলেন, বাংলাদেশে গ্রাহক চাহিদার ভিন্নতা বেশি থাকায় প্যাকেজ চালু করতে সময়ের প্রয়োজন হয়।

গ্রামীণফোনের চিফ মার্কেটিং অফিসার সাজ্জাদ হাসিব বলেন, বাংলাদেশের বাজারে আনলিমিটেড অফারের প্যাকেজে গ্রাহকরা উপকৃত হবে। আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশকে ডিজিটাল অর্থনীতির দেশে রূপান্তরে সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে গ্রামীণফোন কাজ করবে।

রবির চিফ কমার্শিয়াল অফিসার শিহাব আহমেদ বলেন, নেটওয়ার্ক বিস্তারের প্রতিযোগিতা এবং সাশ্রয়ী মূল্যে গ্রাহকসেবা দিতে সব অপারেটর চেষ্টা করছে। বর্তমানে বেশির ভাগ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, আমরা বিনোদনের বাইরেও মানুষের দৈনন্দিন অন্য কাজেও যাতে ডাটার ব্যবহার হয় সে লক্ষ্যে কাজ করছে।

আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজের ওপর গ্রাহকের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে জানিয়ে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, গ্রাহককে আগেও বেশি ডাটা ব্যবহারে উৎসাহিত করতে আমরা এই প্যাকেজ চালু করেছি এবং এর মাধ্যমে গ্রাহক ডাটার যথাযথ ব্যবহার করতে পারবে।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, আমাদের এখন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হচ্ছে, তারপরেও গ্রাহকদের স্বার্থে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, বিটিআরসি কখনও অপারেটরদের পক্ষে ছিল না আর ভবিষ্যতেও থাকবে না।

তিনি বলেন, বিটিআরসি সব সময় গ্রাহকের পক্ষে কাজ করে। মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে বিটিআরসি সর্বদা তৎপর রয়েছে।