রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ, বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব মানবিকতা দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারে কর্মরত ৫০টি স্থানীয় ও জাতীয় এনজিওর নেটওয়ার্ক কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে এই সুপারিশ করেন তারা। ‘স্থানীয়করণ ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান’ শীর্ষক এই সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সিসিএনএফ’র কো-চেয়ার, কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী ও পালস’র নির্বাহী পরিচালক আবু মুর্শেদ চৌধুরী।

আলোচনায় অংশ নেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ, কক্সবাজারের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী, পালংখালী ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবসার, হ্নীলা ইউপি’র সদস্য মরজিনা আক্তার, রাজাপালং ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন, ইপসার নির্বাহী পরিচালক মো. আরিফুর রহমান, জাগো নারী সংস্থার প্রধান নির্বাহী শিউলি শর্মা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মো. মজিবুল হক মনির। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ার সময় স্থানীয় জনগোষ্ঠীদেরকে সাথে নিয়ে তাদের পাশে সবার আগে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।

বিশেষ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ। জনগণের সবচাইতে কাছে থাকেন বিধায় তারা জনগণের প্রয়োজনটা সবচাইতে ভাল বুঝেন। তাই রোহিঙ্গা সংকট ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ জরুরি। ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যেকোন দুর্যোগ বা মানবিক সংকটে ইউনিয়ন পরিষদ সবার আগে প্রত্যক্ষ শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্ত আমাদের ইউপিগুলোর কাঠামোগত কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এই দুর্বলতা কাটাতে জাতীয় নীতি কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। নীতিগত সহায়তা পেলে ইউপি যেকোনও দুর্যোগে কার্যকর ও টেকসই ভূমিকা পালন করতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় উপজেলা পরিষদগুলোকে এসব ক্ষেত্রে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনায় আসা মানবিক ও উন্নয়ন সহায়তার কার্যকর স্থানীয়করণ নিশ্চিত করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে জবাবদিহিতাও। অর্থ সহায়তার কার্যকর ব্যবহার ও সংকটের টেকসই সমাধানে স্থানীয় এনজিও-সুশীল সমাজের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ইউপি সদস্য মরজিনা আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় কোনও কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের মতামত নেওয়া হলে আমরা আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারি। ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, স্থানীয়দের জন্য কী পরিমাণ বরাদ্দ আসছে, কী ধরনের প্রকল্প আসছে তার স্পষ্ট ধারণা আমরা পাই না। স্থানীয় এনজিগুলো আমাদেরকে তাদের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করলেও, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সেভাবে আমাদের সম্পৃক্ত করছে না। ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, সবাই মিলে, সকলের সমন্বয়ে কাজ করলেই কেবল রোহিঙ্গা ব্যবস্থাপনা যথাযথ ও কার্যকর হতে পারে।