ঢাকার বাইরে আজ রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপির সর্বশেষ বিভাগীয় গণসমাবেশ। ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে গণসমাবেশের আগে নিজেদের দুর্গ বলে পরিচিত রাজশাহীতে ব্যাপক লোকসমাগমের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চায় বিএনপি। চলছে সেই ধরনের প্রস্তুতিও।

বিএনপির নেতাকর্মীরা অন্যান্য বিভাগে সমাবেশের ক্ষেত্রে তারা আগে থেকেই সভাস্থলে অবস্থান নেন। কিন্তু রাজশাহীতে তা হচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করেন। তারা বলেন, সমাবেশের জন্য বরাদ্দ মাদ্রাসা মাঠে নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেওয়া হচ্ছে না। শর্তের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের মাঠে থাকতে দিচ্ছে না। ফলে তারা পাশের মাঠে অবস্থান নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় তারা ময়দানে ঢুকতে পারবে।

এদিকে গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ঠেকাতে নানাভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার থেকে পুরো বিভাগে চলছে পরিবহণ ধর্মঘট। সিএনজি ও থ্রি-হুইলার শুক্রবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। পথে পথে চলছে পুলিশি তল্লাশি। সমাবেশ ঘিরে কয়েকদিন ধরে বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে অনেক নেতাকর্মীকে। শহরের প্রতিটি প্রবেশমুখে পুলিশের চেকপোস্ট। শুধু বাস নয় কোনো মাইক্রোবাসও শহরে প্রবেশ করতে পারছে না। সব বাধা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন সমাবেশস্থলে। ট্রেনে, নৌকা, মোটরসাইকেল, নসিমন, এমনকি হেঁটে আসছেন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, গণসমাবেশস্থল অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশ। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরার দাবিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল করছেন। বিকালে সমাবেশস্থলের পাশেই রান্না করছিলেন জয়পুরহাট জেলা থেকে আসা বিএনপি নেতা ইবরাহিম খলিলসহ আরও কয়েকজন।

রাজশাহী মহানগরীর আবাসিক হোটেলগুলোতে পুলিশ তাদের থাকতে দিচ্ছে না। পাবনার ইশ্বরদী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাহমুদুল ইসলাম শাওন বলেন, আমিসহ ৫০ জন নেতাকর্মী বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর বাস টার্মিনাল সংলগ্ন হোটেল আনজুমে উঠেছিলাম। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশ ওই হোটেলে তল্লাশি শুরু করে। এরপর পুলিশ আমাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু সেখানে হাজির হন। উনার হস্তক্ষেপে পুলিশ আমাদের ছেড়ে দেয়। এরপর ময়দানেই শামিয়ানা টাঙিয়ে আমরা থাকছি।

গণসমাবেশের মূল মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মঞ্চ পরিদর্শন করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ হাসান টুকু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু বক্কর সিদ্দীকী, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশাসহ নেতারা।

সার্বিক বিষয়ে গণসমাবেশ আয়োজন কমিটির দলনেতা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। ইতোমধ্যে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে আমাদের পাঁচ লক্ষাধিক নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। গণসমাবেশ শুরুর পূর্বনির্ধারিত সময় রয়েছে দুপুর ২টায়। কিন্তু বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সমাগমের কারণে আমরা সকাল ১০টা থেকেই শুরু করব। রাজশাহীতে এ গণসমাবেশ হবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বড়। রাজশাহী জনসমুদ্রে পরিণত হবে।

রাজশাহীতে এবার সিএনজি ও থ্রি হুইলার ধর্মঘট : বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশের আগে রাজশাহীতে চলমান বাস ধর্মঘটের মধ্যেই এবার সিএনজি অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জেলা মিশুক-সিএনজি মালিক সমিতি দুই দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে। সমিতির সহসভাপতি আহসান হাবিব বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সমাবেশের আগে ১০ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহণ মালিক সমিতি। এটি সমাবেশে বাধা দেওয়ার অংশ বলছেন বিএনপি নেতারা। চলমান এ বাস ধর্মঘটের মধ্যেই অটোরিকশা ও থ্রি হুইলার ধর্মঘটও ডাকা হলো।বিএনপির সমাবেশের জন্যই এই ধর্মঘট ডাকা হলো কিনা জানতে চাইলে মিশুক-সিএনজি মালিক সমিতির সহসভাপতি আহসান হাবিব বলেন, ‘না, না। একেবারেই এ রকম না। বাস মালিকরা আমাদের ওপর রীতিমতো অত্যাচার করছে। আমাদের চলতে দিচ্ছে না রাস্তায়। বাধ্য হয়ে এ সিদ্ধান্ত। দুপুর থেকে ধর্মঘট পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে। আলোচনা হবে, সমাধান হবে, তারপর ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে। তার আগে না।’