নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিভিন্ন সময় সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সবচেয়ে বেশি সুযোগ যাকে দিয়েছিলাম, সেই বেইমানিটা করলো’।

বুধবার (১৫ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

সুবিধা নেওয়া ড. ইউনূস বেইমানি করে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবথেকে একটা চ্যালেঞ্জ ছিল পদ্মা সেতু। দেশ চালাতে এসেছি, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য গড়তে আসিনি।

কেউ যদি কখনো অপবাদ দিতে চায়, সেটা গ্রহণ করা সম্ভব না। আর কারও কাছে আমরা মাথা নত করে চলতে চাই না। পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। ’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো আমাদেরই একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি নিজেই সবথেকে বেশি সুযোগ দিয়েছি। ব্যবসা-বাণিজ্য, তাঁর ব্যাংকে টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুতেই সবচেয়ে বেশি সুযোগ যাকে দিয়েছিলাম, সেই বেইমানিটা করলো।

সামান্য ব্যাংকের একটা এমডি পদের জন্য। সেটা হলো ড. ইউনূস। আমি নাম বলবো। কারণ এখন আমি পদ্মা সেতু করে ফেলেছি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক, সেই ব্যাংকের এমডি, আইন অনুযায়ী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে। তখন ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত এমডির পদে সে ছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক একটা উদ্যোগ নিয়েছিল, আসলে আইনগতভাবে সে থাকতে পারে না।

আমরা বলেছিলাম, আপনি গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হোন। অ্যাডভাইজার ইমেরিটাস হিসেবে একটা মর্যাদা দিয়ে তাকে দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি সেই এমডি পদটা ছাড়বেন না। ’

ড. ইউনূসকে সুযোগ দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অথচ গ্রামীণ ব্যাংক চালাতে পারে না। ১৯৯৮ সালে যখন ভয়াবহ বন্যা, সে সময় এই ব্যাংকে প্রথমে একশ কোটি, তারপর দুইশ কোটি, তারপর চারশ কোটি টাকা আমি গ্রামীণ ব্যাংকে দিয়েছিলাম। ব্যাংকটা যেন চালু থাকে।

কারণ গরিব মানুষের সেবা, গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে। কিন্তু গরিবের কাছ থেকে প্রায় ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত সে ইন্টারেস্ট নিতো—এটি হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়। ’

দ্বিতীয় দফায় আবারও সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দ্বিতীয় ছিল যখন আমি ডিজিটাল সিস্টেম নিয়ে আসলাম সমস্ত টেলিকমিউনিকেশনে, আগে সব এনালগ ছিল এবং মোবাইল ফোনের ব্যবসা দিয়ে দিলাম প্রাইভেট সেক্টরে, তাকেও একটা ব্যবসা দেওয়া হলো। আরও যে দুটো দিয়েছিলাম তাদের বেশি সুযোগ দেইনি। গ্রামীণ ফোনের জন্য রেলওয়ে ফাইবার অপটিক্স ব্যবহারের সুযোগ আমরা দিয়েছিলাম। ’

‘১০০ কোটি টাকার একটা ডিপোজিট দিতে সেটা থেকে তাকে মওকুফ করেছিলাম। তাকে অন্যান্য সুবিধা দিয়েছিলাম। সব ধরনের সুবিধা তাকে এত বেশি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই লোকই এমডি পদে থাকতে পারবে না। অথচ এটা আইনগত ব্যাপার।

এটা জানার পরও সে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর থেকে শুরু করে সরকারের সকলকে আসামি করে দুইটা মামলা করে। কিন্তু প্রত্যেকটা মামলা হেরে যায়। হেরে গিয়ে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ড. ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক আমাদের টাকাটা (পদ্মা সেতু নির্মাণে) বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি তখন ঘোষণা দিয়েছিলাম পদ্মা সেতু নিজের টাকায় করবো। যেদিন নিজের টাকায় করতে পারবো সেই দিনই করবো। কাজেই খুব স্বাভাবিক অনেকেই ভেবেছিল—এটা বোধহয় আমরা কোনোদিন করতে পারবো না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি। ’

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোকে ‘রহস্যজনক’ উল্লেখ করে একটি মহল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তিন বাহিনী ছাড়াও অন্যান্য সব বাহিনীর প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ দিয়ে যে কাজটা (পদ্মা সেতু নির্মাণ) আমরা সম্পন্ন করেছি, যারা এর বিরোধিতা করেছিল তাদের কিন্তু একটা উদ্দেশ্য আছে। কিছু কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি, যেমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যেন ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি।

কী করবে তা জানি না। তবে ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন, এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুনটা, সেটাও কিন্তু একটা জায়গা থেকে আগুন ধরে কিন্তু বিক্ষিপ্ত কয়েকটা জায়গায় একসঙ্গে আগুন ধরে কীভাবে? আর রেলের আগুনটার একটা ভিডিও আমরা পেয়েছি, নিচের দিক থেকে, রেলের চাকার কাছ থেকে আগুন জ্বলছে, এটা কী করে হয়? নিশ্চয়ই জিনিসগুলো রহস্যজনক’।

‘এজন্য আমি বলবো সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর দিকে সবার নজর দিতে হবে। নিরাপত্তা দিতে হবে’। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান।