বিনা টিকিটে ভ্রমণ রোধ করতে পারছে না রেল। ফলে প্রতিদিনই বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। লোকাল, মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেনের প্রায় অর্ধেক যাত্রীই টিকিট কাটছে না। আর এভাবে বিনা টিকিটে ট্রেন চড়ায় শুধু আন্তঃনগর ১০৫টি ট্রেনেই প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা আয় বঞ্চিত হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ২৫৫টি মেইল ও লোকাল ট্রেনেও নির্ধারিত আসনের এক-চতুর্থাংশ যাত্রী টিকিট কাটে না।

অথচ ওসব ট্রেনের নির্ধারিত আসনের তিন থেকে চার গুণ বেশি যাত্রী রেলে ভ্রমণ করে। লোকাল, মেইল ও আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট না কাটায় প্রতিদিন রেলকে গড়ে ২ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রতিদিন সোয়া দুই লাখ যাত্রী বহন করে। সঙ্গে বিনা টিকিটের যাত্রী হিসাব করলে সংখ্যাটি তিন গুণ হবে। বর্তমানে রেলের টিকিট পরীক্ষকের (টিটিই) সংখ্যা খুবই কম। আন্তঃনগর ট্রেনে মাত্র ২৫ শতাংশ টিটিই কাজ করছে। ১০৫টি ট্রেনের মধ্যে ৪০টিতেও তারা যথাযথভাবে অবস্থান করতে পারছে না। একেকটি ট্রেনে ন্যূনতম ১০ থেকে ১২ জন টিটিই থাকার কথা থাকলেও মাত্র দুই-একজন দায়িত্ব পালন করছে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, আমাদের লোকবল স্বল্পতা অনেক। তাছাড়া ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও নেই। তারপরও যেসব অভিযান পরিচালনা হয়, সেখানে বিনা টিকিটের কিছু যাত্রীর কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে, রেলওয়েতে ২৩ হাজার ১৭৮ পদ শূন্য। সারা দেশে ১২৩টি রেলস্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এসব স্টেশন ও সংলগ্ন জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সড়ক পরিবহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে পারছে না রেল।

সব মিলে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটির আর্থিক ক্ষতি বছর বছর বেড়েই চলেছে। এখান থেকে বেরিয়ে এসে রেলকে লাভজনক করতে হলে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনীয় লোকবল ও তাদের ক্ষমতা দিতে হবে বলে তারা মনে করেন।

সূত্র জানায়, রেলে এক টাকা আয় করতে প্রায় ছয় টাকা খরচ হচ্ছে। আর দেশের রেল স্টেশনগুলো যথাযথভাবে তৈরি করা হয়নি। ফলে কোনো স্টেশনেরই শতভাগ নিরাপত্তা নেই। যে কারণে মানুষ খুব সহজেই স্টেশনে প্রবেশ ও বের হতে পারে এবং খুব সহজেই ট্রেনে উঠতে পারে। দেশের প্রধান দুটি রেলস্টেশন কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে যে কেউ খুব সহজেই বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠতে পারে।