- শিক্ষাজীবনে প্রথম শ্রেণিপ্রাপ্তরা বিদেশি উচ্চ ডিগ্রি ও প্রশিক্ষণে অগ্রাধিকার পাবেন
- চাকরির ২০তম বছরে যারা পদোন্নতি পাবেন না তাদের অবসরের সুযোগ থাকছে
- বিভাগীয় মামলায় দণ্ডিতরা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পোস্টিং পাবেন না
- ডিসি পদে যারা পোস্টিং পাবেন তাদের বয়স হবে ৪৫ বছর
- একাধিক জেলায় তিন বছরের বেশি ডিসি হিসেবে থাকতে পারবেন
- প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে যারা পোস্টিং পাবেন তারা মূল বেতনের ৫০ ভাগ প্রণোদনা পাবেন
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এবং সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য কর্মজীবন পরিকল্পনা নীতিমালা নামে একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন সময়ে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও কমিটিসমূহ একটি যুগোপযোগী সিভিল সার্ভিস গঠনের যে সব পরামর্শ তথা সুপারিশ করেছে, তার আলোকেই এই নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিয়োগে মেধার প্রাধান্য, পদোন্নতিতে প্রশিক্ষণের ফলাফলের গুরুত্ব, স্বচ্ছ ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ায় পদোন্নতি প্রদান, উদ্ভাবনী কাজের জন্য পুরস্কার ও আর্থিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা থাকছে এ নীতিমালায়।
এসডিজি-২০৩০ এবং ভিশন-২০৪১ এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ন্যায়নিষ্ঠ মেধাবী শৃজনশীল দক্ষ নিরপেক্ষ প্রতিযোগিতামূলক ও জনমুখী সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলাই এই নীতিমালার লক্ষ্য। ন্যায্যতা স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সাথে সরকারি সেবা প্রদানে একটি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ও ব্যবস্থাপনাই এর উদ্দেশ্য।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার সংবাদকে বলেন, আমরা আগে সচিব কমিটির অনুমোদন নেবো। তার পর নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে সময় বেশি লাগবে বলে মনে করি না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন সময় এই নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয় এবং একাধিক ওয়ার্কশপ ও বিভাগীয় কমিশনারদের মাধ্যমে মাঠ প্রশাসনের মতামত নিয়ে এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রণীত নীতিমালার আলোকে চাকরিতে প্রবেশ পর্যায়ে ও পরবর্তীতে উচ্চতর সব পর্যায়ে শূন্য পদের সংখ্যা, প্রতি বছর অবসরে যাওয়ার সংখ্যার আলোকে বছর-ভিত্তিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পেশাগত দক্ষতা বিশ্বমানে উন্নীত করার জন্য চাকরির প্রতিটি ধাপে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরিকাল, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদন, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শৃঙ্খলা প্রতিবেদন এবং সুপিরিয়র সিলেকশন বোডের্র (এসএসবি) মূল্যায়ন বিবেচনা করে নির্দিষ্ট নম্বর বণ্টনের বিধান রাখা হয়েছে। চাকরির ২০তম বছরে উপসচিব কিংবা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি পেতে ব্যর্থ কর্মকর্তাকে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে উপসচিব বিংবা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে সব প্রকার আর্থিক সুবিধাসমেত অবসরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এ নীতিমালায়।
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে সিনিয়র সহকারী সচিব বা সমমর্যাদার পদে পাঁচ বছরের সন্তোষজনক চাকরির জন্য ১০ নম্বর, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনে ৫০ নম্বর, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ১০ নম্বর, শিক্ষাগ্যতার জন্য ১০ নম্বর, শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে ১০ নম্বর এবং এসএসবির মূল্যায়নের জন্য ১০ নম্বর থাকবে। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতিতে উপসচিব পদে তিন বছর চাকরির জন্য ১০ নম্বর, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনের জন্য ৫০ নম্বর, এসিএডি প্রশিক্ষণের মূল্যায়নে ১০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১০ নম্বর, শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে ১০ নম্বর এবং এসএসবির মূল্যায়নে ১০ থাকবে।
অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে যুগ্মসচিব পদে দুই বছরের চাকরির জন্য ১০ নম্বর, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনে ৫০ নম্বর, এসএসসি প্রশিক্ষণের মূল্যায়নে ১০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা ১০ নম্বর, শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে ১০ নম্বর এবং এসএসবির মূল্যায়নে ১০ নম্বর থাকবে।
তবে কোনো কর্মকর্তা চাকরি জীবনের ২০ বছরের মধ্যে উপসচিব কিংবা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি না পেলে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে পদোন্নতির সব শর্তপূরণ সাপেক্ষে তাকে উপসচিব বা যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিতে পারবে। সরকার চাইলে চাকরি ২৫ বছর পূর্তিতে যেকোনো কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে পারবে। তবে এখনো এ ব্যববস্থা কার্যকর রয়েছে।
সূত্র জানায়, পদায়নের ক্ষেত্রে মৌলিক মাপকাঠি হবে দক্ষতা, যোগ্যতা, পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং বিষয়-ভিত্তিক জ্ঞান। সরকার উপযুক্ত কর্মকর্তাকে তার জ্যেষ্ঠতা, একাডেমিক শিক্ষা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চাকরির অভিজ্ঞতা, বিশেষ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা বিবেচনা করে সচিব পদে পদায়ন করা হবে। সমগ্র চাকরি জীবনে পাঁচ বছরের বেশি লিয়েনে যাওয়ার সুযোগ থাকবে। পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা, নৈতিকতা এবং উৎকৃষ্ট কাজের স্বীকিতি দেয়া হলে দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তারা অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনে উৎসাহী ও মনোযোগী হবেন।
সে ক্ষেত্রে প্রণোদনা হিসেবে উদ্ভাবনী কাজের স্বীকৃতি ও পুরস্কার, বিদেশ প্রশিক্ষণে প্রেরণ ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনের সুযোগ প্রদান, ভালো কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে পদায়ন বিবেচনা, প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বৈদেশিক মিশন, দূতাবাসে পদায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান, দুর্গম এলাকা, পার্বত্য জেলায় কর্মরতদের পরবর্তীতে পদায়নের ক্ষেত্রে এ অথবা বি ক্যাটাগরির জেলায় পদায়ন তথা পোস্টিং দেয় হবে।
দুর্গম, পাহাড়ি, হাওড় এলাকায় পোস্টিংয়ের সর্বোচ্চ সময় হবে মাত্র এক বছর ছয় মাস। মাঠ প্রশাসনসহ কর্মক্ষেত্রে নারী কর্মকর্তাদের উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী কর্মকর্তাদের পদায়ন, দেশি ও বিদেশি প্রশিক্ষণে তাদের মনোনয়নের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশেষ দৃষ্টি রাখা হবে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিদ্যমান সরকারি নীতিমালা, বিধি, সার্কুলার, আদেশ ইত্যাদি সংশোধন, বিয়োজন, পরিমার্জন করার প্রয়োজন হলে তা করা হবে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট রুলস-১৯৮১ অনুসারে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সুপারিশ পাওয়ার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োগ চূড়ান্ত করা হবে। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণে মেধাবীদের অগ্রাধিকার এবং মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা চাকরির সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। মেধাবী তরুণরা যেন সরকারি চাকরিকে পেশা হিসেবে গ্রহণের আগ্রহী হয় সেই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
চাকরিতে শিক্ষানবিশকাল হবে দুই বছর। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ গ্রহণ, নির্ধারিত সংখ্যক কেইস নথির টিকা টিপ্পনী প্রস্তুত, ট্রেজারি প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় পরীক্ষায় সব বিষয়ে উত্তীর্ণ হওয়া, অর্থাৎ সব প্রকার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বিভাগীয় পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা, চাকরিকাল দুই বছর পূর্ণ হওয়া এবং সন্তোষজনক চাকরিকাল পূর্ণ হলেই কেবল চাকরি স্থায়ী করা হবে। সদ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের যোগদানের পরপরই এক বছর ছয় মাসের আবশ্যিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ছয় মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
তার মধ্যে ছয় মাস প্রশাসন একাডেমিতে এবং কোর্সের ধারাবাহিকতা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চার মাস সংযুক্ত থাকবেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখার কাজের বিষয়ে ধারণা লাভ করবেন। ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্য সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে যারা সর্বোচ্চ ফলাফল করবেন তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। এ ছাড়া সম্ভব হলে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে-বিএমএ ওরিয়েন্টেশন কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। তবে বিএমএর কোর্স চাকরি স্থায়ীকরণের শর্ত হিসেবে নেয়া হবে না।
চাকরি স্থায়ী হওয়ার তিন বছর পর সহকারী কমিশনার পদে ওই সব কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হবে যারা সাফল্যের সাথে ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে সিনিয়র স্কেল পাবেন। সেই ক্ষেত্রে সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগের কার্যাবলি সংক্রান্ত একটি স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। চাকরি ছয় বছর পূর্তিতে ইউএনও পদে পোস্টিং দেয়া হবে।
পোস্টিংয়ের আগে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যারা লিয়েনে থাকার কারণে এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তাদের জন্য দুই সপ্তাহের ভূমি-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর ধারাবাহিকতায় সাত বছর চাকরি পূর্তিতে অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক পদে পদায়ন করা হবে। পদায়নের আগে দুই সপ্তাহের ভূমি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং প্রশিক্ষণের ফলাফল পদায়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে।
উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবশ্যই অ্যাডভান্স কোর্স অন অ্যাডমিনেট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে করতেই হবে। প্রশিক্ষণে দাপ্তরিক বাস্তবধর্মী দাপ্তরিক সমস্যা সমাধান, ক্রিটিকাল রিজনিং, একক ও প্রেজেন্টেশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, নেতৃত্ব ও কৌশলগত পরিকল্পনা, সরকারি ক্রয় ব্যবস্থাপনা, বাজেট ও অর্থ ব্যবস্থাপনা, উদ্ভাবন, ই-গভর্ন্যান্স, ই-নথির ব্যবহার এবং পাবলিক-প্রাইভেট পাটর্নারশিপ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এসিএডি প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিদেশে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পাঠানো হবে।
জাতিসংঘ স্বীকৃত কোনো দেশের বেস্ট প্র্যাকটিস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনে প্রধান্য দেয়া হবে। যুগ্মসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য সিনিয়র স্টাফ কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে স্ট্যাটিজিক লিডারশিপ, নীতিনির্ধারণী কর্মকৌশল প্রস্তুতকরণ, পলিসি বিশ্লেষণ, পাবলিক ম্যানেজমেন্ট রিফর্ম, জিও ডিপি কোলাবেরেশন নেগোসিয়েশন স্কিল, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট, বিনিযোগ পরিবেশ, অর্থনৈতিক কূটনীতি, সরকার পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু অন্তর্ভূক্ত থাকবে। কোর্সের অংশ হিসেবে তাদেরকে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় অথবা আন্তর্জাতিক সংস্থায় এক্সপোসুয়ার ভিজিটে পাঠানো হবে। বিভিন্ন দেশ, সংস্থা, ইনস্টিটিউটের বেস্ট প্র্যাকটিস সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনকে প্রধান্য দেয়া হবে।
অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য পলিসি প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স-পিপিএমসি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্যান্য প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে হবে। বিশেষায়িত জ্ঞান ও মানবসম্পদ তৈরির জন্য উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের জন্য নির্দিষ্ট বিষয়-ভিত্তিক কাজের ধরন বিবেচনা করে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ দেয়া হবে। সিনিয়র সচিব, সচিবরা দেশের সমসাময়িক ও সরকারের বিভিন্ন নীতি-নির্ধারণী বিষয়ে কর্মশালা, সেমিনারে অংশ নেবেন। জনপ্রশাসন বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্র বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে কোলাবোরেশনে বছরব্যাপী নিয়মিত কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করবে।
জেলা প্রশাসক-ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে ইউএনও হিসেবে পাঁচ বছর, এডিসি হিসেবে দুই বছর এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞ উপসচিবদের মধ্যে থেকে নির্বাচন করা হবে। একজন ডিসি এক জেলায় তিন বছর এবং একাধিক জেলায় চার বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। বর্তমানে তিন বছরের বেশি কেউ ডিসি হিসেবে থাকার নিয়ম নেই। ডিসি পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার বয়স হবে ৪৫ বছর। বর্তমানে ডিসি পদে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৫০ বছর নির্ধারণ করা আছে। যুগ্মসচিবদের মধ্য থেকে বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ করা হবে। তাদের সর্বোচ্চ বয়স হবে ৫২ বছর এবং এক বিভাগে দুই বছরের বেশি কেউ বিভাগীয় কমিশনার থাকতে পারবেন না। তবে একাধিক বিভাগে তিন বছর থাকতে পারবেন।
অতিরিক্ত সচিবদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হবে এবং তিন বছরের বেশি এক মন্ত্রণালয়ের কাজ করতে পারবেন না। তবে সরকার চাইলে এই মেয়াদ হ্রাস-বৃদ্ধি করতে পারবে। সরকার উপযুক্ত কর্মকর্তাদের সচিব পদে নিয়োগ দেবে। সেই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, চাকরির অভিজ্ঞতা, বিশেষ বিষয়ে জ্ঞান এবং দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে। কমপক্ষে তিন বছর সচিব পদে চাকরি করা কর্মকর্তাকে সিনিয়র সচিব পদে পদায়ন করা হবে। মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব পদে পদায়নের ক্ষেত্রে তিন বছর সচিব পদে চাকরির অভিজ্ঞতার সাথে মাঠ প্রশাসনে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
বৈদেশিক উচ্চতর ডিগ্রি এবং শিক্ষাজীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি, বিভাগ ও ক্লাসপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। শিক্ষাজীবনে কোনো পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণিপ্রাপ্তরা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পোস্টিং পাবেন না। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিযুক্ত ক্যাডার কর্মকর্তাদের সরকারি বৃত্তি ও উচ্চতর বৈদেশিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোনয়ন দেয়া হবে। সে ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে দুই বছর সাফল্যের সাথে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে নিযুক্ত কর্মকর্তারা মূল বেতনের ৫০ ভাগ হারে প্রণোদনা ভাতা পাবেন। পদায়নের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিবেচনায় নেয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে শতকরা ৭৫ ভাগ নম্বর পাওয়া কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কর্মজীবনে বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা যাবে না। একজন কর্মকর্তা সমগ্র চাকরি জীবনে পাঁচ বছরের জন্য লিয়েনে যেতে পারবেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।