বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনার মুখে পৌরসভার নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে পৌরসভা আইনের সংশোধনী বিল পাস হয়েছে। বিলটি পাসের প্রতিবাদে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তবে কিছু সময় পর তিনি সংসদকক্ষে আবার ফিরে আসেন।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল, ২০২২ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুন বিলটির সংশোধনীর কয়েকটি বিষয়ে ব্যাখ্যা দাবি করেন। তবে সে বিষয়ে প্রত্যাশিত জবাব না পাওয়ায় তিনি ওয়াকআউট করেন। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।
গত ২৩ জানুয়ারি বিলটি সংসদে তোলা হয়। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয় ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিদ্যমান আইনে বলা আছে, পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। এর কম হলে হবে না। সংশোধনে তা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হয়েছে। আর পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের মেয়র ও কাউন্সিলদের অপসারণ সংক্রান্ত ধারণায় নতুন একটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। ধারা ‘ঝ’ যুক্ত করে বলা হয়েছে, মেয়র অথবা কাউন্সিলর তার নিজ পদ থেকে অপসারণযোগ্য হবেন, সরকার কর্তৃক, সময় সময়, প্রদত্ত নির্দেশ পালন করতে ব্যর্থ হন।
বিদ্যমান আইনের ৪২ (১) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো শহরকে পৌর এলাকা ঘোষণার পর পৌরসভার কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করিবে এবং পৌরসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত উক্ত প্রশাসক প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করিবেন।
বিলে এই ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে; বলা হয়েছে, পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন পরিষদ গঠনের আগ পর্যন্ত কাজ চালানোর জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেবে সরকার। সরকারি কোনো কর্মকর্তা বা সরকার উপযুক্ত মনে করে এমন কোনো ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দেবে।
বিলে পৌরসভার পরিষদ বাতিলসংক্রান্ত ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাদিক্রমে ১২ মাস বেতন বকেয়া থাকলে পরিষদ বাতিল হবে।
নতুন পৌরসভা গঠিত হলে বা কোনো ইউনিয়নের অংশবিশেষ পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হলে বিলুপ্ত ইউনিয়ন বা বিলুপ্ত অংশে কর্মরতদের পৌরসভায় অন্তর্ভুক্তির সুযোগ রাখা হয়েছে বিলে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত জীবন ও পর্যাপ্ত নাগরিক সেবার প্রত্যাশায় অধিকসংখ্যক মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। একই সঙ্গে শহর এলাকার মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন নতুন অনেক পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর দেখা যায় যে, পৌরসভার নাগরিকসেবা প্রদান এবং নিজস্ব প্রশাসন পরিচালনার সক্ষমতা থাকে না।
মন্ত্রী বলেন, সুশাসন নিশ্চিত ও পর্যাপ্ত সেবা প্রদানে শহরগুলোকে বাসযোগ্য করতে শহর গঠনে জনসংখ্যার ঘনত্বের মান পরিবর্তন প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে পৌরসভাসমূহের মেয়াদ পাঁচ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদ প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত, পূর্বের পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পারে। অনেক সময় পৌরসভার মেয়াদ শেষ হলেও বিভিন্ন কারণে রিট মামলা বা অন্য কোনো মামলা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ অনির্ধারিত সময়ের জন্য পৌর প্রশাসন পরিচালনা করে। ফলে আইনের এই শর্ত সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার ক্ষেত্রে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন। বিলটি পাস হওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক স্পিকারের কাছ থেকে সময় নিয়ে হারুনের বক্তব্যের জবাব দেন। হারুনের ওয়াকআউটকে ‘স্ট্যান্টবাজি’ আখ্যা দিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, হারুন আইনটি পুরোপুরি পড়েননি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।