নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান মাদারীপুরে গিয়ে বলেছেন, ‘ইভিএমে ত্রুটি ধরতে পারলে ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)’। তবে, এমন পুরস্কার ঘোষণার তথ্যটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাঁর দাবি, ১০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণার তথ্যটি উদ্ভট। সিইসি এ ধরনের উদ্ভট কথা বলতে পারেন না।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে আজ মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন সিইসি।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা চার-পাঁচটি মিটিং করেছি। এখনও পুরোপুরি আস্থাভাজন হতে পারিনি। আরও মিটিং হবে। সেখানে পর্যালোচনা করব। আমরা বলেছি, ইভিএম নিয়ে সবার আস্থা অর্জন করতে চাই। আগামীকালও কারিগরি মিটিং হবে।’
ইভিএমে ত্রুটি শনাক্ত করতে পারলে কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণার মতো কোনো কথা বলেননি দাবি করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রহসনে রূপান্তর করার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। এটা আমরা অন্তর থেকে বলছি। সুন্দর নির্বাচন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সুস্থ ধারা অব্যাহত থাকুক।’ তবে, কিছুদিন আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ইভিএম-সংশ্লিষ্টদের কেউ এ ধরনের কথা বলে থাকতে পারেন বলে মনে করছেন সিইসি।
‘কিছুটা স্মৃতিভ্রম হয়ে নির্বাচন কমিশনার ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলতে পারেন’—এমন মন্তব্য করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘এটা কমিশনের বক্তব্য নয়। কোনো কমিশনার তো দূরের কথা, কোনোভাবে কমিশনের কোনো কর্মচারীও এ কথা বলেননি। আমরা মিডিয়ায় কথা বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলি। কমিশনকে অপদস্ত করার জন্য, সিইসিকে অপদস্ত করার জান্য তিনি বলেননি। কথাটা আসলে কিছুটা স্মৃতিভ্রমভাবে হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। যাঁরা ইভিএম নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের পণ্যটার প্রশংসা করতে গিয়ে আবেগবশত হয়ত এ কথাটা বলেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মিডিয়ায় কথা বলার ক্ষেত্রে সবার সতর্ক অবস্থান নেওয়া উচিত, দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। এর মাধ্যমে ইসির অবস্থান অবনমিত হয়েছে। এতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। ইসির প্রতি মানুষ আস্থা আনতে চায়। শুরুতে যদি তা বিনষ্ট হয়ে যায়, তাহলে আগামী যে জনপ্রত্যাশিত নির্বাচন, তা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এখনও চেষ্টা করছি, চার কমিশনার ও আমি অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’
ইভিএমে চ্যালেঞ্জ এখনই নয় মন্তব্য করে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, কমিশনার যে বক্তব্যটি দিয়েছেন, তা আরেক জায়গা থেকে ‘কোট’ করতে গিয়ে হয়তো বিভ্রান্তি হয়ে গেছে। যদি কেউ বিশ্বাস করে এ যন্ত্রটা এক হাজার শতাংশ নির্ভুল হয়, তাহলে উনি ১০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলেন, তাহলে উদ্ভট নয়। আমরা তো বলছি না যে এটা ১০০ শতাংশ নির্ভুল। ওই ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘একটি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বলতেই পারে। এ ধরনের একটা বক্তব্য কোনো একটা জায়গায় উত্থাপিত হয়েছিল। হয়তো আমার মাথায় নেই। এটা কোট করতে গিয়ে মিস কোটিং হয়েছে। এটাই সত্য, সত্য এবং সত্য।’
আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই: সিইসি হাবিবুল আউয়াল
আরও কয়েকটি বৈঠকের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে ইভিএম নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান সিইসি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘মাত্র পাঁচ থেকে সাত দিন আগে চিঠি দিয়ে সবাইকে জানালাম, ইভিএম নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি, কোনো চাপের মুখে আমরা মাথানিচু করছি না। আমরা যদি ১০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণাই করে দিই, তাহলে ইয়ে (সংলাপ) হবে কেন?… আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।’
ইভিএম নিয়ে বক্তব্য আসার পর বিএনপিনেতাদের সমালোচনাকেও ইতিবাচকভাবে দেখেন বলে জানান সিইসি।
এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), বেগম রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।