বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। সোমবার শপথ নেবেন নবনির্বাচিত এ রাষ্ট্রপতি। বেলা ১১টায় তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ, এরপর সরকার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এবার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে বঙ্গভবনের মর্যাদা রক্ষাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ সততা ও সফলতার সঙ্গে করবেন বলে সবার প্রত্যাশা। ১৩ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করার প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন। নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে পরপর দুই মেয়াদে ১০ বছর শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী মো. আবদুল হামিদকে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হবে তার বিদায় অনুষ্ঠান। এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে এত বড় আয়োজনে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। ঐতিহাসিক এই সময়টিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিদায়ি সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। নতুন রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত এবং বিদায়ি রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত বঙ্গভবন।
রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে অন্তত পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়। ৬ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হাসান খানের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মূল কাজ শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে গঠিত বাকি চারটি উপকমিটির কার্যক্রম সমন্বয় এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সার্বিক চিত্র অবহিত করা। অন্য কমিটিগুলো হলো অতিথি তালিকা প্রণয়ন কমিটি, আমন্ত্রণপত্র প্রাপ্তি যাছাই কমিটি, আসন ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভ্যর্থনা কমিটি।
শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ১ হাজার ২৩৮ জনকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়ে থাকে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগের। অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া থেকে শুরু করে প্রটোকলসংক্রান্ত সার্বিক দায়িত্ব দেখভাল করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বঙ্গভবনকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও আপ্যায়নের নেতৃত্ব দেয় আপন বিভাগ। রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার। প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মহড়ার আয়োজন করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শপথ গ্রহণের পরপরই কার্যভার গ্রহণসংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
ইতিহাস গড়ে রাজকীয় বিদায় : নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেওয়ার পর আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হবে মো. আবদুল হামিদকে। পরপর দুই মেয়াদে ১০ বছর শেষ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে বঙ্গভবন ত্যাগ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২০১৩ সালের ২০ মার্চ তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হন। একই বছর ১৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন তিনি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। ২৪ এপ্রিল দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হবে তার।
এদিকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদায় অনুষ্ঠান ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজকীয় বিদায়ের জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ। বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ি গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড প্রদান করবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট। অন্যদিকে অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে সাবেক রাষ্ট্রপতিকে বহন করবে সুন্দর সাজানো গাড়ি। বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি ধরে দাঁড়াবেন। তারপর গাড়ি সামনে অগ্রসর হবে। বঙ্গভবনে দীর্ঘ অবস্থানের সমাপ্তি শেষে আবদুল হামিদ বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি ভিভিআইপি মোটর শোভাযাত্রায় নিকুঞ্জ এলাকায় তার নতুন বাসভবনের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন।
আবদুল হামিদ একজন পরোপকারী, বিনয়ী, সদালাপী এবং প্রচারবিমুখ ব্যক্তি। সমাজের সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে সুন্দর ও হৃদয়গ্রাহী আচরণের জন্য তিনি সুপরিচিত। তার প্রাণবন্ত বক্তব্য শ্রোতাদের আকৃষ্ট করে। তিনি অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত। দরিদ্র জনগণের জন্য রয়েছে তার অকৃত্রিম দরদ ও ভালোবাসা। আবদুল হামিদ বিবাহিত। তিনি তিন পুত্র ও এক কন্যার জনক। বিভিন্ন দেশের সংবিধান ও ইতিহাস গ্রন্থ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি সংবলিত পুস্তক পাঠ করা তার প্রিয় শখ। অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও কর্মময় জীবনের অধিকারী এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে শ্রদ্ধা, সম্মান ও পছন্দের।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্মানে ১৭ এপ্রিল বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে আবদুল হামিদ তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি হলেও তিনি নিজেকে সব সময় দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই মনে করতেন। রাষ্ট্রপতির পদকে দায়িত্ব হিসাবে বিবেচনা করে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। বঙ্গভবনের উন্নয়নে তার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, বঙ্গভবন মর্যাদার প্রতীক। আবদুল হামিদ শুধু সংস্কার করা এয়ার রেইড শেল্টার ও বঙ্গভবনের তোষাখানা জাদুঘর উদ্বোধন করেননি, বঙ্গভবনের কিছু অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তও করেন। রাষ্ট্রপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে দেশে দুটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
আবদুল হামিদ এক সময় লালমাটিয়ার বাসায় থাকতেন। তবে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় থাকবেন বলে জানা গেছে। ১২ মার্চ বঙ্গভবনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মো. হামিদ জানান, ঢাকায় থাকলেও মাসে অন্তত ১০-১২ দিনের জন্য হলেও হাওড়ে যাবেন তিনি। আইনানুযায়ী অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে আরও কিছু সুবিধাও পাবেন আবদুল হামিদ। তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন। এই বার্ষিক ব্যয়ের অঙ্ক সরকার নির্ধারণ করবে।
একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন এবং সরকার নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসাবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন আবদুল হামিদ। তিনি দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউজ বা রেস্টহাউজে বিনা ভাড়ায় অবস্থান করতে পারবেন। আইনানুযায়ী চিকিৎসা সুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউজ বা রেস্টহাউজে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীও পাবেন।
মাঠের রাজনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রপতি : মুক্তিযোদ্ধা ও মাঠপর্যায়ের রাজনীতিবিদ মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা শহরের শিবরামপুরের জুবিলী ট্যাংকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম চুপ্পু। পিতা শরফুদ্দিন আনছারী, মাতা খায়রুন্নেসা। তার ছোটবেলা কেটেছে পাবনা শহরেই। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণিতে। সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে এসএসসি পাশের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাশ করে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহিদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি নেন।
মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ আহ্বানে ১৯৬৬ সালে ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত অনেকবার বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে থাকা মো. সাহাবুদ্দিন মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৯৭২ সালে পাবনার নগরবাড়ী ঘাট জনসভা এবং পাবনা স্টেডিয়ামের জনসভায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্য শুনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে বুকে জড়িয়ে আশীর্বাদ করেন এবং হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
মো. সাহাবুদ্দিন পাবনা জেলার আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি এবং পাবনা জেলা বাকশালের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হিসাবে মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ছেষট্টির ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠিত হলে তিনি পাবনা জেলা কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মনোনীত হন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন তিনি। ওই সময় সামরিক স্বৈরশাসকদের রোষানলে ব্যাপক নির্যাতনের পাশাপাশি তিন বছর জেল খাটেন। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। শুরুর দিকে পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি। বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এর মধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও দায়িত্ব পালন করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারক জীবনের ইতি টানার পর আবারও তিনি আইন পেশায় ফেরেন। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী হিসাবে কাজ করার সময় সরকার তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন নবনির্বাচিত এ রাষ্ট্রপতি।
দুদক কমিশনার হিসাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিরুদ্ধে ওঠা তথাকথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একজন অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী, বিনয়ী ও দৃঢ়চেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অতন্দ্র প্রহরী।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনার পরবর্তীকালে ক্ষমতায় গিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে সাংবাদিকতা পেশায়ও যুক্ত ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন। পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরির সদস্য ছিলেন তিনি। রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে তিনি নিয়মিত কলামও লিখতেন। ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্মসচিব ছিলেন। বর্তমানে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক অ্যাডভাইজারের পাশাপাশি ফ্রেন্ডস ফর চিলড্রেন অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
মিঠামইন থেকে বঙ্গভবন : আবদুল হামিদ ১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম হাজি মো. তায়েব উদ্দিন এবং মা মরহুমা তমিজা খাতুন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে তিনি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরোধিতা করেন। সে সময় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে কারারুদ্ধ করে।
১৯৬৯ সালের শেষ পর্যায়ে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মো. আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া ১৯৭২ সালে গণপরিষদ সদস্য, ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ-সদস্য নির্বাচন হন।
আবদুল হামিদ সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। পরে স্পিকার হন। অষ্টম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন এবং সফলভাবে এ দায়িত্ব পালন করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।