নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, আইজিপির আত্মীয় ও সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এমন অভিযোগে এ এ এম সালাউদ্দিন ভূইয়া (৫৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সালাউদ্দিন ভূইয়া নিজেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পরিচয় দিতেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তার কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরিহিত বাঁধাই করা একটি ফটোফ্রেম, সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত একটি গেঞ্জি, ক্যাপ, মানিব্যাগ ও মেডেল, চারটি জাল লেটার প্যাড, একটি জাল সিল, দুটি জাল ক্রয়াদেশ, দুটি জাল সোয়াচ প্যাড, দুটি চেকবই, তিনটি মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন কন্টেন্ট এবং নগদ প্রায় ১০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, একসময় মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সালাউদ্দিন। পরবর্তী সময়ে প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ভবনে অফিস কক্ষ ভাড়া নিয়ে নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মালিক পরিচয় দিতেন। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ কোম্পানির কাছ থেকে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে টাকা পরিশোধ না করে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এই সালাউদ্দিন।

র‌্যাব মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রতারক সালাউদ্দিন ভূইয়া নিজেকে বিভিন্ন কোম্পানির সিইও, মার্কেটিং ম্যানেজার বা মার্চেন্ডাইজার পরিচয় দিতেন। তিনি বিভিন্ন গার্মেন্টস কোম্পানির কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে পণ্য ক্রয়ের আবেদন করতেন। পরে ভুয়া ক্রয়াদেশ পেয়ে গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ কোম্পানিগুলোর ক্রয়াদেশ অনুযায়ী সম্পূর্ণ পণ্য ডেলিভারি করতেন। সালাউদ্দিন পণ্য ডেলিভারি পাওয়ার পর তাদের টাকা পরিশোধ না করে পণ্যগুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতেন।

ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা ফেরত চাইলে টাকা না দিয়ে তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতেন। এছাড়া নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আবার কখনো আইজিপির আত্মীয় বা সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিতেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি একজন ভুক্তভোগীসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান র‌্যাবের কাছে অভিযোগ দেয়। পরবর্তীতে র‌্যাব ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরপরই রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক এ এম এম সালাউদ্দিন ভূইয়াকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, প্রায় পাঁচবছর ধরে তিনি এই ধরনের প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমানে মহাখালীতে একটি অফিস সাবলেট নিয়ে তিনমাস এই অপরাধ করে আসছেন। কোনো ঠিকানায় তিনি ছয়মাসের বেশি অবস্থান করেন না। তাছাড়া ফটোশপের মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এডিট করে প্রতারণার কাজে ব্যবহার করেছেন। তার নামে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তিনটি মামলা রয়েছে।