এক সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে জাহাজে করে বিভিন্ন শ্রেণির মালামালা আনা-নেওয়া হতো যমুনা নদীর এই শাখা নদী দিয়ে। কালের বির্বতনে নদীটি এখন মরা খাল। হারাতে বসেছে নদী নামটিও। চরে ভূট্টা, আর নদীতে চাষ হচ্ছে ধান।
দীর্ঘদিন নদীর খনন না হওয়ায় এমন বেহাল অবস্থা বলে দাবি স্থানীয়দের।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা শহরের কোলঘেঁষে হাকিমপুর উপজেলার সীমানা দিয়ে আঁকা বাঁকা হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে শাখা যমুনা নদীটি। উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটারের নদীটি দুই এক জায়গায় হাটু পানি থাকলেও বেশির ভাগ জায়গায় স্থানীয়রা ধান চাষ করছেন।
সরেজমিনে নদীটির কাটলা ইউনিয়নের হরিহরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার কোলঘেঁষে দক্ষিণ দিকে আঁকা বাঁকা হয়ে বয়ে গেছে নদীটি। নদীর পূর্বপাশের অনেক জায়গায় স্থানীয়রা বালু তোলার জন্য বসাচ্ছেন কোদালের কোপ। এর পাশেই উত্তর দিকে সামান্য পানি প্রবাহ থাকলেও সেখানে লাগানো হয়েছে ধানের চারা।
স্থানীয় হাফিজ আলী বলেন, ‘আমার জন্মের আগে থেকেই দেখে আসছি নদীটি। এখন নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে পাকা রাস্তার পাশে এসেছে। এর আগে নদীটি মাঠের মাঝ দিয়ে বয়ে চলত। গতি পথ পরিবর্তনের কারণেই আমরা সেখানে ধান চাষ করি। মজার বিষয় হলো, নদীতে ধানের চারা রোপণ করায় শেষ এখানে কোনো কিটনাশক কিম্বা সার ব্যবহার করা হয় না।
ষাটোর্ধ্ব রহমত আলী বলেন, ‘আমার দাদা গল্প করত এক সময় এই নদীটি দিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পণ্য নিয়ে মানুষ আসত। কালের বির্বতনে এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন করায় নদীতে পানি থাকে না। শুস্ক মৌসূমে নদীতে এখন হাটু পানিও থাকে না। ফলে নদীতে জাহাজ নয় এখন সাধারণ ছোট মাছগুলোও চোখে পড়ে না।
ওই এলাকার নিশিকান্ত বলেন, ‘২০ থেকে ২২ বছর আগেই এই নদীতে স্থানীয় ‘মাংরা উরাও’ নামের এক ব্যক্তি শ্যালো চালিত ইঞ্জিন দিয়ে কাটলা বাজার থেকে বিরামপুরে যাতায়াত করত। তখন নদীতে সারা বছরজুড়ে থাকত পানি। কিন্তু এখন আর তাতে পানি নেই। মাঠ হয়েছে। সেখানে ধানের চাষাবাদ হচ্ছে। আর চরে ভূট্টার আবাদ।
জানতে চাইলে বিরামপুর পৌর মেয়র আক্কাস আলী বলেন,‘শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীতে নাব্যতা ধরে রাখতে ইতোমধ্যে দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড বিরামপুর শহর থেকে কাটলা ইউনিয়ন পর্যন্ত নদীটি খননের সব প্রস্তুতি নিয়েছে। নদীটি খনন করলে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং পানি সংকট কমে যাবে।
জানতে চাইলে দিনাজপুর-৬ আসনের সাংসদ এমপি শিবলী সাদিক বলেন, ‘যেহেতু দিনাজপুর একটি কৃষি প্রধান এলাকা। এখানের নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ থাকা জরুরি। পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে শুধু এলাকা ভিক্তিক খনন নয়, শুস্ক মৌসুমে নদীগুলোতে পানি আনতে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। নদী খননের জন্য সরকার অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খনন কাজ হলে এই এলাকার কৃষিতে অনেক বিপ্লব ঘটবে। ’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।