সন্ধ্যা গড়াতেই নিয়মিত গাড়ি নিয়ে উধাও হন বাগমারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারুক সুফিয়ান। কেউ জানেন না এভাবে প্রতি রাতে কোথায় যান তিনি।
খোঁজখবর রাখার একপর্যায়ে জানা গেলো, রাতের আঁধারে দরিদ্র শীতার্থ মানুষদের মাঝে নিভৃতে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করেন ফারুক সুফিয়ান। শুরুর কয়েকদিন বিষয়টি একেবারেই গোপনীয়তার সঙ্গে তিনি পরিচালনা করলেও বর্তমানে শীতবস্ত্র প্রাপ্তদের মাধ্যমেই অনেকটা জানাজানি হয়েছে।
এ নিয়ে সর্বমহলের প্রশংসায় ভাসছেন ইউএনও।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ান বলেন, তিনি মিডিয়ার শিরোনাম হতে চান না। যার কারনেই সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হতদরিদ্র ও শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র গুলো বিতরণ করেছেন। কখন কি ভাবে বিতরন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারী কাজ ফাঁকি দিয়ে কোন কিছু করা হয়নি। এর বেশী আর কিছু বলতে চাই না।
এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন ব্যতিক্রমী কর্মকান্ডের সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি ঠোকানোর জন্য তিনি এমন কর্মকান্ড শুরু করেছেন বলেও জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের অনেকেই। প্রকৃত শীতার্থ ও হতদরিদ্রদের মধ্যে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
গনিপুর ইউনিয়নের মহববতপুর আদিবাসী পাড়ার রাসমনি পাহাড়ী ও রতন কুমার বাসফোড় জানান, তারা আদিবাসী বলে তাদের কেউ খোঁজ রাখেনা। সরকার বাড়িঘর তৈরী করেন সে গুলো থেকেও তাদেরকে বঞ্চিত করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারেরা ভোটের সময় আসলেও তারা আর তাদের খোঁজ রাখে না।
শীতবস্ত্র তো দূরের কথা! সরকারী কোন অনুদানই তাদের ভাগ্যে জোটে না। তিনি জানান, সন্তানাদী নিয়ে অনেক কষ্টে এবার শীত পার করছিলাম। হঠাৎ গতকাল রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ইউএনও স্যার আমাদের পাড়ায় ঢোকেন এবং সবাইকে ডেকে তুলেন। তিনি জানতে চান তারা কি সরকারী ভাবে কোন শীতবস্ত্র পেয়েছেন কি না? শীতবস্ত্র না পাওয়ায় তিনি আদিবাসী পাড়ায় গরীব দেখে দেখে সবাইকে শীতবস্ত্র কম্বল দিয়ে দেন।
ইউএনও’র এমন কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেন আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে তারা ইউএনও ফারুক সুফিয়ানের জন্য দোয়া করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)’র দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে শীত মৌসুমে শীতার্থ মানুষের জন্য সরকারী ভাবে ৭ হাজার ৫২০ পিচ শীতবস্ত্র (কম্বল) বরাদ্দ দেয়া হয়। যা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার মানুষের জন্য একাবারেই অপ্রতুল। এ কারনে ইউএনও মনে করেন এই সংখ্যক শীতবস্ত্র স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে বিতরণের দায়িত্ব দিলে অনেক প্রকৃত অনেক দু:খী মানুষ বঞ্চিত হতে পারেন।
সেখান থেকেই তিনি নিজে ঘুরে ঘুরে কম্বল বিতরণের সিদ্ধান্ত নেন।
উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিদিন অফিস শেষ করেই সন্ধ্যার সময় গাড়ী ভর্তি কম্বল গুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উপজেলায় কতটি এতিম থানা, মাদ্রাসা, বৃদ্ধাশ্রম আছে সে গুলোর তালিকা তৈরী করেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসের সহযোগীতায়। পরে তালিকানুসারে তিনি ওই সকল প্রতিষ্ঠানে শীতবস্ত্র কম্বল গুলো বিতরন করেন।
এছাড়াও গ্রামে গ্রামে ঘুরে গ্রাম পুলিশদের সহযোগীতায় তিনি গরীব দেখে দেখে শীতবস্ত্র কম্বল গুলো বিতরন করে আসছেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।