মোঃ শাহিন আলম সিরাজগঞ্জ (তাড়াশ) রিপোর্টার :বিধাতার কী নিষ্ঠুর বিধান যে বাঙালির রক্ত ঝরা শোকাবহ আগস্টেই শহিদ শেখ কামালের জন্মদিন। বুকে পাথরচাপা কষ্ট নিয়ে আজ আমরা তাকে শুভেচ্ছা বা শ্রদ্ধাই কেবল জানাতে পারি। মনের বিশাল দরজা-জানালা খুলে দিয়ে উদাত্ত স্বরে বলতে পারি না ‘শুভ জন্মদিন’। সবাই মিলে গাইতে পারি না, ‘হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ শেখ কামাল’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শহিদ হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শেখ কামাল এ দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতিজগতের এক উজ্জ্বল নাম। সংগঠক হিসেবে তিনি অতুলনীয়। তারই নেতৃত্বে গড়ে ওঠে আবাহনী ক্রীড়া চক্র, আজকের আবাহনী লিমিটেড।
স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীের প্রধান সংগঠক শেখ কামাল বাংলাদেশের আধুনিক নাট্যচর্চার অন্যতম পথিকৃত্। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর এডিসি ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর সেনাবাহিনী ত্যাগ করে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে যুবসমাজ গঠনে অধুনিক চিন্তা ও সৃজনশীলতার কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শেখ কামাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেখ কামাল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের প্রথম শহিদ। শেখ কামালের সঙ্গে যারা নানা কর্মকাণ্ডে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন তারা সম্মিলিত হয়ে তার জন্মদিন পালন করেছিলেন ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায়। জন্মদিন পালনে জাতীয় প্রেসক্লাবের পাশাপাশি তাড়াশ প্রেসক্লাব ও তাড়াশ মডেল প্রেসক্লাব সহ তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে ও দলীয় নেতা কর্মী ও সতীর্থ-স্বজনেরা একটি ৭২ তম শুভ জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহ্ফিলের আয়োজন করা হয়। এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহ্ফিলে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শ্রী সঞ্জিত কর্মকার উপস্থিত ছিলেন তাড়াশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও থানা আওয়ামী লীগের সকল নেতা কর্মী। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ তাড়াশ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মোঃ ফরহাদ হোসেন বিদ্যুৎ সহ যুবলীগের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন ও থানা আওয়ামী যুবলীগের সকল নেতা কর্মী।
উপস্থিত ছিলেন প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক কর্মীরা সহ সাধারণ জনতার একাংশ। আলোচনা সভায় আলোচিত হয় মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল স্বাধীন বাংলাদেশে উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত হিসেবে এসেছিলেন। চেয়েছিলেন এ দেশের যুবমানস নতুন ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে। খেলার মাঠ থেকে নাটকের মঞ্চ, সংগীত ভুবন থেকে জাতীয় রাজনীতি—সবখানেই তিনি আলোড়ন তুলেছিলেন। নতুন প্রতিভা অন্বেষণ করতেন তিনি । সবাইকে সমানভাবে আগ্রহ জোগাতেন। বন্ধুবত্সল, পরোপকারী শেখ কামালের সততা, রুচির পরিচ্ছন্নতা, দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা ও প্রগাঢ় নিষ্ঠার পরিচয় পাওয়া যায় তার কর্মযজ্ঞের প্রতিটি পদক্ষেপে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার দক্ষ নেতৃত্বের গুণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন যথার্থ যুবনেতা। শেখ কামালের চরিত্রের বহুমাত্রিকতা আজকের দিনের সকলের জন্য শিক্ষণীয়। ‘উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত’ প্রকাশনাটি খুব বড় কলেবরে করা সম্ভব হয়নি প্রধানত আর্থিক সামর্থ্যের কারণে। কিন্তু প্রকাশনাটি সমৃদ্ধ হয়েছিল বেশ কয়েকটি অর্থবহ লেখায়। তথ্যবহুল লেখকের তালিকায় ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম থেকে শুরু করে ডাকসুর কর্মচারী গোপাল চন্দ্র দাস এবং শহিদ মধুদার ছেলে অরুণ দে পর্যন্ত।
সবচেয়ে তথ্যবহুল এবং সংরক্ষণে রাখার মতো নিবন্ধনটি লিখেছিলেন বন্ধু ড. হাবিবুল হক খোন্দকার। তার নিবন্ধে অনেক অজানা তথ্য ছিল ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ির অভ্যন্তরীণ আবহ সম্পর্কে। তথ্য ছিল শেখ কামাল এবং তার নববিবাহিতা স্ত্রী কৃতী ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামাল সম্পর্কে। ড. খোন্দকার ছিলেন শেখ কামাল এবং সুলতানা আহমেদ খুকীর সহপাঠী। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে একসঙ্গে পড়তেন। খোন্দকার হাবিবের লেখা থেকে জানা যায় শেখ কামাল এবং সুলতানা খুকী লেখাপড়াতেও মেধাবী ছিলেন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তাদের আরেক সহপাঠী তওরিদ হুসেইন বাদলকে যখন ‘উদ্দীপ্ত যৌবনের দূত’-এর জন্য একটি স্মৃতিকথা লেখার অনুরোধ করা হলো তখন বাদলের তাত্ক্ষণিক উত্তর ছিল, শেখ কামালের কোনো স্মৃতি নাই। শেখ কামাল আমাদের কাছে জীবনভর জীবন্ত হয়ে আছেন ও থাকবেন। সর্বশেষ শহিদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর রুহেরমাগফেরাত কামনা করে শুভ জন্মদিন প্রিয় নেতা। আলোচনা সভা জন্ম দিন উপলক্ষে কেক কর্তন ও দোয়া মাহ্ফিলের সকল কার্যক্রম শেষ করা হয়।