রাজশাহীতে এবার নামমাত্র মূল্যে ছাগলের চামড়ার বেচাকেনা হয়েছে। অনেকে চামড়া নিয়ে গেছেন ফ্রি। দুইটি ছাগলের চামড়ায় যে দাম পাওয়া যাচ্ছে তাতে ১ কাপ চা পাওয়া যাবে। কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি গরুর চামড়ারও।
রাজশাহীতে এবার ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ঘুরে ঘুরে গরুর চামড়া কিনেছেন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। আর খাসির চামড়া ১০-৩০ টাকা, বকরি ৫-১০ দরে। অনেকে দাম শুনে ফ্রিতেই চামড়া দিয়েছেন।
আর কুরবানিদাতারা বলছেন, কুরবানির চামড়া গরিব-মিসকিনদের হক। চামড়া বিক্রির টাকা তাদেরই দান করে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে চামড়ার যে দাম তা কতটা খারাপ তা দাম শুনেই বোঝা যায়৷পবার দামকুড়ার বাসিন্দা টিয়া আলম বলেন, এখন এককাপ চায়ের দাম ১০ টাকা। আর একটি ছাগলের চামড়ার দাম বলছে ৫ টাকা। এর চেয়ে লজ্জার আর কী আছে। এখানে গরিবের হক নষ্ট করা হচ্ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার মধুপুর এলাকায় জিয়ারুল ইসলাম কুরবানির ঈদেই চামড়া কেনেন। তার পর স্থানীয় আড়তে বিক্রি করেন। তিনি জানান, তিনি নিজেই ঘুরে ঘুরে কমদামে চামড়া কিনেছিলেন। আগে থেকেই আঁচ করেছিলেন চামড়ার বাজার এবারও খারাপ থাকবে। হয়েছেও তাই। আড়তে ছাগলের অনেক চামড়া বিভিন্ন খুঁত ধরে নেওয়া হয়নি। সেগুলো আড়তেই রেখে এসেছেন। ভালোগুলোরও দাম পাননি। দিনশেষে কোনোমতে খরচটা তুলতে পেরেছেন।
এদিকে সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম না পাওয়ার ক্ষোভ রয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। অসন্তুষ্ট কুরবানিদাতারাও। যদিও জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ বলছে, এবার চামড়ার দাম ভালো।
রাজশাহীর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দাবি, আড়তে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা হলে তাদের লাভ হতো। কিন্তু প্রত্যেকবার যেটা হয়, এবারও হয়েছে। বিভিন্ন অজুহাত আর ছলচাতুরি করে আড়তদাররা কমদামে চামড়া কিনেছেন।
তিনি আরও জানান, এবারও আড়তে অনেকেই অচল চামড়া ফেলে গেছে। সেগুলো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ধ্বংস করা হবে।
তবে রাজশাহীতে চামড়ার দাম ভালো পেয়েছেন বলে মনে করেন জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি আসাদুজ্জামান মাসুদ। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়ার বেচাকেনা হয়েছে। তবে চামড়া ছড়ানোর সময় অনেকে কেটে ফেলেন। সেগুলো চোখের আন্দাজে দাম দেওয়া হয়। আর খুব বেশি কাটাছেঁড়া হলে সেই চামড়া বিক্রি করা যায় না। তাই তারাও সে চামড়া কেনেন না।
এ বছর ঢাকার বাইরে গরুপ্রতি বর্গফুট চামড়া ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। এ ছাড়া খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ১২ থেকে ১৪ টাকা। তবে রাজশাহীর কোথাও বর্গফুট হিসাবে চামড়া কেনা হয়নি। এর চেয়ে কম দামে চোখের আন্দাজেই চামড়া কেনা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, এবার মাদ্রাসাগুলোর মাধ্যমে বেচাকেনা বেশি হয়েছে। অনেকে মাদ্রাসাই সরাসরি চামড়া দান করে গেছেন। আর এবার তারা গরুর চামড়া ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা করেও কিনেছেন। খাসির চামড়া ৪০-৮০ এবং বকরির চামড়া ২০-৪০ টাকা দরে কিনেছেন।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদের তথ্যমতে, এবার জেলায় আনুমানিক ১ লাখ ৯৪ হাজার ২ছাগল ও ভেড়া এবং ৭২ হাজার গরু কুরবানি হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।