মানিকগঞ্জে ইট পোঁড়ানো ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রের শর্তগুলো না মেনেই চলছে বেশিরভাগ ইটভাটা। এসব ইটভাটাগুলোতে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়া বিগত বছরগুলোর তুলনায় চলতি বছরে প্রশাসনের অভিযান কমে গেছে। ফলে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই ভাটা পরিচালনা করতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার একাধিক ভাটার ইট পোড়ানোর লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বেশিরভাগ ভাটা মালিকরা নবায়নের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে যেসব ভাটা লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে পরিচালিত হচ্ছে সেসব ভাটা মালিকেরাই ইট পোঁড়ানোর লাইসেন্সের নবায়নের আবেদন করেছেন। এছাড়া অধিকাংশ ভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্রের মেয়াদও শেষ হয়েছে।

বিগত সময়ে নিয়ম ভঙ্গ করে ইট পোড়ানোর লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অবস্থানগত ছাড়পত্র দেওয়া এসব ভাটাগুলোকে পুনরায় ছাড়পত্র না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশবাদী ও স্থানীয়রা।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মানিকগঞ্জ জেলায় বৈধ্য ইটভাটার সংখ্যা ১২৫ টি। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ জেলায় বৈধ্য ও অবৈধ্য মিলিয়ে ইটভাটা রয়েছে ১৫১ টি।

সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর ১১টি অবৈধ্য ইটভাটা রয়েছে বলে জানিয়েছে। চলতি বছর ৮ টি অবৈধ্য ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এগুলো হলো হরিরামপুর উপজেলার সততা ব্রিকস, স্বাধীন ব্রিকস, আমিন ব্রিকস, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার একতা ব্রিকস, এ্যামিকা ব্রিকস, মোহনা ব্রিকস ও সিংগাইর উপজেলার সুমাইয়া ব্রিকস এবং আলী আকবর ব্রিকস। এর মধ্যে হরিরামপুর উপজেলার স্বাধীন ও আমিন ব্রিকস ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়। একইসঙ্গে আটটি ভাটার মালিককে ৩ লাখ করে মোট ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে সাটুরিয়া উপজেলায় আরেক অভিযানে ফৌজিয়া ব্রিকসকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করে।

২০২০ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে তিন দফায় অভিযান চালিয়ে ৩০টির মতো ইটভাটা বন্ধ করে দেয়। সেই তুলনায় চলতি বছর (২০২২) ইটভাটা গুলোতে অভিযানের পরিমাণ কমে গেছে।

বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারি বিমল রায় বলেন, ‘শুধুমাত্র অবৈধ্য ইটভাটাগুলোতে জরিমানা করলে পরিবেশ দূষণ রোধ হবেনা। যেসব ভাটা বৈধ্য কাগজপত্র থাকার পরেও নিয়ম না মেনে পরিবেশ দূষণ করে তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। রাতের অন্ধকারে যারা কৃষি জমির মাটি কেটে নিচ্ছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।’

পরিবেশবাদী সংগঠক অ্যাভোকেট দীপক কুমার ঘোষ বলেন, ‘আইনের তোয়াক্কা না করে যখন ইটভাটার অনুমোদন দেওয়া হয় তখন ওই এলাকায় ইটভাটা বাড়তে থাকে।অর্ধযুগ পড়ে দেখা যায় ওইখানে আর কৃষি জমি নেই। ফলে তখন যে কেউ চাইলে আশেপাশে আরো ইটভাটা গড়ে তুলতে পারে। এভাবেই ইটভাটাগুলো দিন দিন কৃষি জমি শেষ করছে। অন্যদিকে উক্ত এলাকায় কৃষি জমি না থাকায় নবায়নের সময় ভাটাগুলো বৈধ্য দাবি করছেন। ফলে পুনরায় আবার নবায়নের আবেদন করে এসব ভাটা নবায়নও পেয়ে যাচ্ছে। তবে আইনের প্রয়োগ পুরোপুরি থাকলে বেশিরভাগ ভাটা বন্ধ হয়ে যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতি বছর ভাটাগুলোতে যৎসামান্য অভিযান হলেও পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকানোর জন্য তা যথেষ্ঠ নয়। এসব ভাটায় অভিযানগুলো নিয়মিত ও জোড়দার করা প্রয়োজন।’

ভাটাগুলোতে অভিযান কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নূর আলম বলেন, ‘ইটভাটাগুলোতে অভিযান শুরু হয়েছে। এটি পর্যায়ক্রমে চলমান থাকবে।’

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘হাইকোর্টে জমা দেওয়া ১১ টি অবৈধ্য ইটভাটার মধ্যে ৭ টিতে মামলা চলামন থাকায় কিছু করা সম্ভব নয়। বাকি ৪টি ইটভাটায় পর্যায়ক্রমে অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

 

কলমকথা/ বিথী