আমিনুল ইসলাম ঘাটাইল প্রতিনিধি :

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা শহরে আসতে শুরু করে। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের আশপাশসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। গত ১ জুন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে বেসরকারি সিটি বিশ^বিদ্যালয় পড়–য়া ছাত্র তপন রবি দাস রিভলভার ঠেকিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন। তপন রবি দাস টাঙ্গাইল শহরের বেবিস্ট্যান্ডের নরেশ রবি দাসের ছেলে । মিথ্যে বানোয়াট সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেন সাবেক সাংসদ রানা। এদিকে সাংসদ রানার সংবাদ সম্মেলনের পরেই আরেকটি গ্রুপ মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদে হত্যার বিচার চেয়ে আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করেন। যেখানে ফারুক হত্যা মামলার আসামী সাংসাদ রানাসহ অন্যান্য আসামীদের দ্রুত বিচার দাবী করে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহম্মেদ। টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে সোমবার বেলা ১১টায় লিখিত বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা বলেন, গত ১ জুন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক তথাকথিত সংবাদ সম্মেলনের অভিযোগ করা হয়। আমি নাকি তপন রবিদাস নামে এক ব্যক্তিকে রিভলবার ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি প্রদান করেছি। এমনকি ২৪ ঘন্টার মধ্যে শহর ছেড়ে চলে যেতে বলেছি। তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। প্রকৃতপক্ষে তপন রবিদাস নামে কোন ছেলেকে আমি চিনি না। কখনো দেখিও নাই। এটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো নাটক, যার কুশীলবরা পর্দার আড়ালে রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মিথ্যা মামলায় এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় দীর্ঘ ৩৪ মাস ২১ দিন কারাবন্দি ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি শুরু করতে থাকে নতুন হাইব্রিড আওয়ামী লীগরা। জেলখানা থেকে বের হওয়ার পর একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হয় হাইব্রিটরা। সেখানে সাবেক টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভুঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনি বড় মনি এবং তার বড় ভাই টাঙ্গাইল বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি সুকৌশলে আরো একটি অপকর্ম করে জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে আমাকে নতুন করে ফাঁসাতে চাচ্ছে। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় প্রশাসন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এবং আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকে অবগত করি। তাদের সতর্ক নজরদারিতে কুচক্রীমহলের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। সম্প্রতি তপন রবিদাস নামের একজনকে দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়ে কুচক্রীমহল যড়যন্ত্র করছে। তিনি আরও বলেন, আমার বড় ভাই আমিনুর রহমান খান বাপ্পী হত্যাকারী টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনি, বড় মনি ও মিরন। তারা টাঙ্গাইলে হত্যা, লুট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রাহাজানি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে অন্যায়ের রাজত্ব কায়েমকারী হাইব্রিড মার্কা আওয়ামী লীগারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং দলীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোতালেব হোসেন, আনেহলা ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার মো. শাহজাহান, দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন তালুকদার, লোকেরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ হোসেন, জেলা শ্রমিক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্বাস আলী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসতিয়াখ আহমেদ রাজীব প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন শেষে সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা শহরের কলেজপাড়ায় তার নিজ বাড়ির সামনে নেতাকর্মীদের নিয়ে পথসভার আয়োজন করেন। সেখানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন। এদিকে একই স্থানে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদের স্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নাহার আহমেমদ। এসময় লিখিত বক্তব্যে নাহার আহম্মেদ জানান, গত ২০১৩ সালের ১৮ই জানুয়ারি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহম্মেদকে হত্যা করা হয়। ফারুক আহম্মেদের হত্যাকারী খান পরিবারের লোকজন আইনের হাতে ধৃত হয়। দীর্ঘ সময়েও বিচারের রায় না হওয়ায় সেই সন্ত্রাসীরা টাঙ্গাইলে অশান্তির নগরীতে পরিণত করছে। সম্প্রতি ফারুক আহম্মেদ হত্যার প্রতিবাদকারী বেসরকারি কলেজ ছাত্র তপন রবীদাসকে পেটে পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান। এঘটনায় সংবাদ সম্মেলন ও থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন অদ্যবধি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গাইল বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদ ও আমিনুর রহমান আমিন প্রমুখ। টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি। এ মামলায় তিনি দীর্ঘ ৩৪ মাস ২১ দিন কারাবন্দি ছিলেন। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।