চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই পটুয়াখালীর বাউফলের আলোচিত সেই চেয়ারম্যানকে তালাক দিয়ে পছন্দের স্বামীর কাছে চলে গেছেন কিশোরী। শনিবার (২৬ জুন) রাতে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ওই কিশোরীকে তার প্রেমিকের আত্মীয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ সময় তার পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনার সাক্ষী কাজি আবু সাদেক হোসেন। পরে রবিবার (২৭ জুন) ওই কিশোরী ও তার প্রেমিকের পরিবারের সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন তাদের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। কাজি আবু সাদেক হোসেন জানান, ২৫ জুন শুক্রবার জুমার পর চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিয়ে সম্পন্নের পর থেকেই নববধূ উদাসীন ছিল।

সে বারবার তার প্রেমিকের কাছে যেতে চেয়েছে। এরমধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি উঠে এলে স্থানীয় প্রশাসন ও চেয়ারম্যানের পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। সামাজিকভাবে বিষয়টি তাদের কাছে দৃষ্টিকটু মনে হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যায় বৈঠক বসে।

একপর্যায়ে ওই কিশোরী চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে তালাক দিতে রাজি হন। কাজি আরও জানান, রাত ৯টার দিকে কিশোরী বধূ ও চেয়ারম্যান শাহিন উভয়ই তালাকনামায় স্বাক্ষর করেন।

পরে ওই কিশোরীকে দাদা, নানা, চাচা এবং বাবাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, যারা কাবিনের সময় উপস্থিত ছিলেন, তাদের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে তার প্রেমিকের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। প্রেমের সালিশ করতে গিয়ে কিশোরীকে বিয়ে করলেন ৬০ বছরের চেয়ারম্যান ওই কিশোরী সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম পছন্দের ব্যক্তিকে বিয়ে করতে। কিন্তু বিয়ে করতে হয়েছে চেয়ারম্যানকে। আমি এক রাত চেয়ারম্যানের বাসায় থাকলেও কোনোভাবেই তাকে আমি স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি। আমি আমার পছন্দের মানুষের কাছে যেতে চেয়েছি।

কিন্তু চেয়ারম্যানের ভয়ে ও প্রেমিকের খালাতো ভাইয়ের কারণে তা সম্ভব হয়নি।’ প্রেম ও নিজের পছন্দের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের তিন বছরের প্রেম। বিষয়টি একপর্যায়ে জানাজানি হয় । পরে তাকে মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখানো হয়। এতে কয়েক মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ ছিল।

পরে তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে পুনরায় যোগাযোগ করি। ২৪ জুন বৃহস্পতিবার আমি পছন্দের মানুষের সঙ্গে পালিয়ে যাই। পরে আমার বাবা বিষয়টি কনকদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে অবহিত করেন। শুক্রবার সালিশ বৈঠকে বিষয়টি ফয়সালা করে দেওয়ার কথা জানান চেয়ারম্যান। একথা অনুযায়ী উভয় পরিবারের লোকজন সকালে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদের বাড়ি যায়।

এ সময় চেয়ারম্যান আমাকে অন্য একটি রুমে ডেকে নিয়ে বলেন, তোমার প্রেমিকের টাকা-পয়সা নেই। তুমি তার ঘরে গিয়ে সুখী হতে পারবা না। বরং আমাকে বিয়ে করলে সুখি হবে।’ ওই কিশোরী বলেন, আমি চেয়ারম্যানের কথায় রাজি হইনি। আমি ভেবেছিলাম আমার সঙ্গে তিনি দুষ্টুমি করছেন। কিন্তু রুম থেকে বের হয়ে তিনি বলেন, আমার যে আত্মীয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাকে তালাক দিতে হবে। এরপর কাজি ডেকে এনে তা করা হলো।

পরে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার আমাকে বিয়ে করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার রাতের বৈঠকে ওই কিশোরী জানায়, তাকে প্রেমিকের কাছে যেতে দেওয়া না হলে সে আত্মহত্যা করবে। তখন ছেলে, আত্মীয়স্বজন ও প্রশাসনের চাপে কিশোরীকে মুক্তি দিতে রাজি হন চেয়ারম্যান। রাতে কাজিকে ডাকা হয়। তালাকনামায় স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরে চেয়ারম্যান প্রেমিকের ভাইয়ের কাছে কিশোরীকে তুলে দেন। এ সময় কিশোরীর স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। রবিবার সকালে রমজান আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় ওই কিশোরীর। কিশোরী ও তার প্রেমিকের পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে বাল্যবিয়ে করে তালাক দিয়েছেন কিনা, এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার বলেন, ‘হয়, তালাক হইছে। খুশি হইছেন আপনারা? জন্মতারিখ ভুল করলে হেডা ওই … করছে, আমি তো করি নাই। আমার কাছে যে জন্মসনদ আছে তাতে বয়স ১৮ হয়েছে। ওর বয়স কম হওয়ার পরেও এতগুলো বিয়ে করলো ক্যামনে, হেইয়া ল্যাহেন।’ এরপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘অনুভূতি অনেক ভালো। আবার বিয়ে করবো। একটা না, একসঙ্গে চাইরডা বিয়ে করমু। যদি না পারি তহন কইয়েন।’ এই বলে ফোন কেটে দেন চেয়ারম্যান। তথ্যে গোপন করার অভিযোগ শুক্রবার বিয়ের কাবিননামায় কনের বয়স উল্লেখ করা হয় ১১ এপ্রিল ২০০৩ সাল। অর্থাৎ ১৮ বছর ২ মাস ১৫ দিন বছর। ওই কিশোরী কনকদিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। সেই প্রতিষ্ঠানে জন্মসনদে তার বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ১১ এপ্রিল ২০০৭ সাল। সে অনুযায়ী তার বয়স ১৪ বছর ২ মাস ১৫ দিন। আবার কাবিননামায় চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের বয়স উল্লেখ করা হয় ১ ডিসেম্বর ১৯৬৮। সে অনুযায়ী চেয়ারম্যানের বয়স ৫২ বছর ৭ মাস ২৫ দিন। কিন্তু বাস্তবে তার বয়স ৬০ বছরের কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন জানান, গণমাধ্যমে দেখেছি, কিন্তু কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। প্রসঙ্গত, গত ২১ জুন কনকদিয়া ইউনিয়নে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।