নূরুল হক, মণিরামপুর প্রতিনিধি:মণিরামপুরে লখাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়মসহ নানাবিধ দূর্নীতির কারনে রোববার নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ডিজির প্রতিনিধি মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী জানিয়েছেন বোর্ডের সদস্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ ২ জন সদস্য ও অধিকাংশ প্রার্থীরা উপস্থিত না থাকা এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ থাকায় নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।
জানাযায়, উপজেলার কুলটিয়া ইউনিয়নের লখাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি হলেন এশটি রাজরৈতিক দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা চঞ্চল রায়। আর এ কমিটির মেয়াদ রয়েছে আগামি ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত। ফলে তড়িঘড়ি করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ রায় তিনজন কর্মচারী (অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া) নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ৩ পদের জন্য মোট ৩৬ জন প্রার্থী আবেদন করেন। কিন্তু বিভিন্ন ত্রæটির জন্য ৩ জনের আবেদন বাতিল করা হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ বোর্ডে (মৌখিক পরীক্ষা) উপস্থিত হওয়ার জন্য ৩৩ জন প্রার্থীকে চিঠি (ইনটারভিউ কার্ড) প্রেরণ করা হয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুমন মন্ডল নামে এক প্রার্থীর সাথে ১২ লাখ টাকায় চুক্তি করে-তার নিকট থেকে অগ্রিম ৫ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে প্রজয় রায়ের সাথে ১০ লাখ টাকা চুক্তি করে অগ্রিম ৩ লাখ টাকা এবং আয়া পদের জন্য লক্ষী রায়ের সাথে ১২ লাখ টাকা চুক্তি করে অগ্রিম ৭ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়া হয়। এসব উৎকোচের টাকা গ্রহন করেন বর্তমান সভপতি চঞ্চল রায় ও প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ রায়।
বিষয়টি জানাজানি হলে ৩৩ প্রার্থীর মধ্যে শিমুল হোসেন, লাবনী খাতুন ও নাজমুল হোসেন বাদি হয়ে ২১ আগষ্ট যশোর সহকারি জজ আদালতে পৃথক তিনটি মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে কারন দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। কিন্তু তারা কোন জবাব না দিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর মনিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ডের তারিখ নির্ধারণ করেন। ফলে ১৪ সেপ্টেম্বর আদালত নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। অভিযোগ রয়েছে আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক আবারও ওই ৩ পদে নিয়োগের জন্য রোববার নিয়োগ বোর্ডের আয়োজন করেন। গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের নিয়োগ বোর্ড। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিজি) প্রতিনিধি মণিরামপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী জানান, পাঁচ সদস্যের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকারসহ দুইজন সদস্য এবং অধিকাংশ প্রার্থীরা উপস্থিত না হওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে নিয়োগবোর্ড স্থগিত করা হয়েছে। তবে বোর্ডের সভাপতি চঞ্চল রায় জানান, প্রার্থীদের উপস্থিতির হার কম থাকায় রোববার নিয়োগ বোর্ড সম্পন্ন করা হয়নি। তিনি জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়োগ বোর্ডের পরবর্তি তারিখ নির্ধারন করা হবে। তবে এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলও রিসিভ করেননি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার ও লখাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ রায়। উল্লেখ্য শনিবার এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আদালতের নির্দেশ না মেনে লখাইডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে ৩ কর্মচারী নিয়োগ হতে যাচ্ছে-এমন একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। অবশেষে রোববার বিকেলে নিয়োগবোর্ড স্থগিত করা হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।