মিরু হাসান বাপ্পী,বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: একসময়ের দ্রুতগতির বাহন ছিল ঘোড়াচালিত টমটম। এই বাহন এখন জাদুঘরের মডেল। তবে ঘোড়াচালিত টমটমের জায়গা দখলে নিয়েছে চীনে তৈরি তিন চাকার টমটম। আর চার পেয়ে ঘোড়ার জায়গায় এসেছে ব্যাটারি।
ব্যাটারিচালিত এই টমটম বগুড়ার সান্তাহার ও আদমদীঘি উপজেলায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ টমটম চালিয়ে বেকারত্ব ঘুচেছে পাঁচ শতাধিক লোকের। চালকদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী।
এমনই একজন টমটমচালক সান্তাহার শহরের পাশে দমদমা গ্রামের ছানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এই গাড়ি চালাতে জ্বালানি তেল লাগে না। তাই কালো ধোঁয়া নির্গত হয় না, চলেও শব্দহীন, যা শতভাগ পরিবেশবান্ধব। যাত্রীরাও এই গাড়িতে চলে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
সান্তাহার-রাণীনগর রুটের আরেক টমটমচালক হাসান আলী বলেন, `চার মাস আগে মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় এই টমটম কিনেছি। এটি চালিয়ে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করছি। এতে একসঙ্গে চারজন যাত্রী বসতে পারে। সান্তাহার-নওগাঁ ও এর আশপাশের গ্রামে চলাচলে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা। রাতে চার্জ দিলে দিনে চালানো যায়। ব্যাটারিচালিত হওয়ায় জ্বালানি তেল বা গ্যাস কেনার খরচও নেই। ফলে আয়ের সবটাই থেকে যায়।
সান্তাহার একটি বড় রেলওয়ে জংশন। এই জংশন স্টেশনের ওপর দিয়ে প্রতিদিন আন্তনগর, মেইল ট্রেন, সাধারণ ট্রেন, মালবাহী ট্রেন মিলে অন্তত ৪০টি ট্রেন চলাচল করে, যা রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলাচল করে। সান্তাহারের পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলা সদরের সঙ্গে কোনো রেলযোগাযোগ না থাকায় ওই জেলা সদর ছাড়াও ১০টি উপজেলার রেলপথের যাত্রীসাধারণ সান্তাহারমুখী। ফলে প্রতিদিন হাজারো যাত্রী সান্তাহার রেলস্টেশনে নেমে গন্তব্যে যেতে এবং রেলস্টেশন এলাকায় আসতে এই টমটম ব্যবহার করে।
বর্তমানে শুধু সান্তাহার শহরে পাঁচ শতাধিক টমটম চলে। সুলভ ভাড়া আর অল্প সময়ে পরিবহনসেবা পাওয়ায় এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। টমটমবিক্রেতা রিভা পরিবহনের মালিক বাবু হোসেন বলেন, `চায়নার তৈরি ব্যাটারিচালিত টমটম আমি দেশের বাইরে থেকে আমদানি করে বেকার যুবকদের মধ্যে কিস্তির মাধ্যমে বিক্রয় করে থাকি।’
বগুড়া জেলা সিএনজি ও অটো চার্জার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান টিটু বলেন, `চীনের তৈরি টমটম আমদানির ফলে সান্তাহারের মতো শহরের পরিবহনে নতুন দিগন্ত খুলে গেছে। বেকার যুবকেরা টমটম চালালে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করতে পারছে। তবে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জোর দাবি জানাই, জরুরি ভিত্তিতে এই পরিবহনকে রোড পারমিট দেওয়া হোক।’
এ ব্যাপারে সান্তাহার পৌর প্যানেল মেয়র জার্সিস আলম রতন বলেন, `আমরা এই পরিবহন চালু করার জন্য সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। সান্তাহার পৌরসভা থেকে লাইসেন্স দিয়েছি।’