হাফিজুর রহমান,তালতলী(বরগুনা): প্রতিনিধি ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে টানা পাঁচদিন ধরে বৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানিতে নষ্ট হয়ে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে উপজেলার আশারচরের শুঁটকি পল্লীতে।

মৌসুমের শুরুতেই এমন ক্ষতির মুখে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলে ও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, বরগুনার তালতলী উপজেলার আশার চর এলাকায় কমপক্ষে প্রায় ৫ শতাধিক জেলে শুঁটকি আহরণ করছেন। গড়ে তোলেন ৫ মাসের জন্য অস্থায়ী বসতি। সাগর থেকে ধরা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করা হয়। বৃৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ায় গত পাঁচদিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে শুঁটকিপল্লীর ২১ ব্যবসায়ী ও জেলেদের ২’শ থেকে ৫’শ মাচায় মাছ শুকানোর মাঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার টন শুঁটকি মাছ সাগরে ভেসে গেছে। পাঁচদিনের ভারী বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে ঘরে থাকা আরও অনেক শুটকি মাছ। জেলেদের প্রাথমিক হিসেবে অর্ধ কোটি টাকার বেশি শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। এ অসময়ে ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের বৈরী আবহাওয়ায় এখানকার জেলেরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

প্রতিটি জেলে পরিবার ও ব্যবসায়ীদের ২ থেকে ৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর ফলে শুটকি পল্লী থেকে রাজস্ব আয়ও কমবে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। আশার চরের শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী সেকান্দার আলী বলেন,টানা পাঁচদিন ধরে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বাড়ায় শুঁটকির মাচা তলিয়ে গেছে পানিতে। আমার নিজেরই প্রায় ৩ লাখ টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া সাতদিন ধরে আমার জেলেরা ট্রলার নিয়ে সাগরে যেতে পারছেন না। এজন্য আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। এই শুঁটকি ব্যবসায় প্রতি বছর লাভ হয় এক থেকে দের লাখ টাকা কিন্তু এই বৃষ্টিতে তা চেয়ে দ্বিগুণ লোকসান হয়েছে। এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। আরেক ব্যবসায়ী জামাল আকন বলেন, আমার এখানে ৩০ জন জেলে শুঁটকি শুকানোর কাছে নিয়েজিত আছে। বৃষ্টির এই পাঁচদিন ধরে হাত-পা গুটিয়ে বসে আছে। সাগরেও নামতে পারছি না। যে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছি তা শোধ করতে পারবো না। এই বছর লাভের মুখ দেখা যাবে বলে মনে হয় না। জাফর আকন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতি বছর এই মৌসুমে শুঁটকি পল্লী থেকে ২ লাখ টাকার মতো লাভ হয় কিন্তু এই বছর ক্ষতিই হয়েছে প্রায় ৩ লাখের উপরে। আমার বাসার সামনের মাচায় থাকা লইট্টা ও ছুড়ি মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। শামসুল হক নামের এক জেলে বলেন, এই আশারচরে এই মৌসুমে ৫ মাস শুঁটকি আহরণ করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারিনি। এখন যদি মৌসুমের বাকি সময় আবহাওয়া ভালো থাকে তাহলে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব খুবই কম তবে কিছুটা হলেও লাভ দেখা যেতে পারে। তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বলেন, জেলেদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী টানা বর্ষণে চরগুলোতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার শুঁটকির ক্ষতি হয়েছে। এতে রাজস্বও কমে আসবে শুঁটকি পল্লী থেকে। হাফিজুর রহমান