সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া ফায়ার ফাইটার গাউসুল আজম (২৪) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে  ১২/০৬/২২ রবিবার ভোর রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর এই কর্মী।

গাওসুল আজম

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন রাত ৮টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘বি এম’ কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে সেখানে ছুটে যায় (কুমিরা ফায়ার ইউনিট) গাওসুল ঐ ইউনিটেরই সদস্য ছিলো ঐ অগ্নিকান্ড নিভাতে গিয়ে তার গাড়িতেই আগুন ধরে যায়।

বি এম কন্টেইনার ডিপো

সেখানে অগ্নিদগ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন এই ফায়ার কর্মী গাউসুল আজম। সেখান থেকে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসে। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় গাউসুলকে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়, রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন তরুণ এই ফায়ার ফাইটার।


গাউসুলের বাড়ি সাতক্ষীরার মাগুরা গ্রামে হলেও তার পরিবার যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার খাটুয়াডাঙ্গা গ্রামে থাকেন। তার পিতা মোঃ আজগার আলী, দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে গাওসুল ছোট; তার বোন বড়। মাত্র দেড় বছর আগে মণিরামপুর উপজেলার কাজিয়াড়া গ্রামের কাকলী নামের মেয়ের সাথে বিয়ে হয় নিহত এই ফায়ার ফাইটারের, তার ৬ মাস বয়সী একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে যার নাম সিয়াম। গাউসুলের পরিবার বলতে ছিলো তার বৃদ্ধ বাবা-মা, বোন-ভগ্নিপতি, স্ত্রী কাকলী এবং সন্তান সিয়াম।

গাওসুলের পরিবার

তিনি ২০১৬ সালে খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৮ সালে তিনি ফায়ার ম্যান হিসেবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন

নিহতের চাচা আকবর আলী বলেন, ঢাকায় মরদেহের পোস্টমর্টেম করে। মরহুমের গোসল করিয়ে ফায়ার সার্ভিসের হেড অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে তাকে যশোরে আনার পর “গার্ড অব অনার” প্রদান করে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

খাটুয়াডাঙ্গা পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়

তিনি আরো জানান, ৬মাসের প্রেষনে (ডেপুটেশন) পাঁচ মাস আগে গাওসুল যোগ দেন চট্টগ্রামের কুমিরা ফায়ার ষ্টেশনে। এর আগে বাগেরহাটে কর্মরত থাকাকালে সে প্রায়ই বাড়িতে আসত সে আর আসবে না চিরোদিনের জন্য চলে এসেছে।

ফায়ার স্টেশন কুমিরা চট্টগ্রাম

খাটুয়াডাঙ্গা সাকুলের প্রধানশিক্ষক হজরত আলী ও ইংরেজির শিক্ষক আনসার আলী বলেন, ছাত্র হিসেবে গাওসুল আজম সৎ ও সাহসী হিসেবে পেয়েছি। অল্পকিছুদিনের চাকরিতে সে একজন বীরযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার অভাবে তার মতো বেশ কয়েকজন ফায়ার ম্যান এবার মারা গেছে।
তারা বলেন, আমরা চাই- এই খাতে উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার যেন করে সরকার। তাহলে এমন অকাল মৃত্যু রোধ সম্ভব।

নিহতের ফুফাতভাই জানান, নিহতের ভগ্নিপতি ও এক ফুফাতভাই ঢাকায় মরদেহ আনার জন্যে গিয়েছিলেনতিনি বলেন, ভাইয়ের অকাল মৃত্যুতে এই সংসারের উপার্জনক্ষম একমাত্র অবলম্বন শেষ হয়ে গেল। মামার চাষের জমিও নেই। কীভাবে যে এখন তাদের সংসার চলবে, আল্লাহ জানেন।
বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহৃদয় সহায়তা চান।

মণিরামপুরে ফায়ার ফাইটার গাউসুল আজমের মৃত্যুতে ‘কলম কথা’ পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করেছে।